পাতা:কাদম্বরী.djvu/১১৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাদম্বরী।
১০৯

পথে বর্ষাকাল উপস্থিত। নীলবর্ণ মেঘমালায় গগনমণ্ডল আচ্ছাদিত হইল। দিনকর আর দৃষ্টিগোচর হয় না। চতুর্দ্দিকে মেঘ, দশ দিক্ অন্ধকার। দিবা রাত্রির কিছুই বিশেষ রহিল না। ঘনঘটার ঘোরতর গভীর গর্জ্জন ও ক্ষণপ্রভার দুঃসহ প্রভা ভয়ানক হইয়া উঠিল। মধ্যে মধ্যে বজ্রাঘাত ও শিলাবৃষ্টি। অনবরত মূষলধারে বৃষ্টি হওয়াতে, নদী সকল বর্দ্ধিত হইয়া উভয় কূল ভগ্ন করিয়া ভীষণ বেগে প্রবাহিত হইল। সরোবর, পুষ্করিণী, নদ, নদী পরিপূর্ণ হইয়া গেল। চতুর্দ্দিক জলময় ও পথ পঙ্কময়। ময়ূর ও ময়ূরীগণ আহ্লাদে পুলকিত হইয়া নৃত্য আরম্ভ করিল। কদম্ব, মালতী, কেতকী, কুটজ প্রভৃতি নানাবিধ তরু ও লতার বিকসিত কুসুম আন্দোলিত করিয়া নবসলিলসিক্ত বসুন্ধরার মৃদগন্ধ বিস্তার পূর্ব্বক ঝাঞ্ঝাবায়ু উৎকলাপ শিখিকুলের শিখাকলাপে আঘাত করিতে লাগিল। কোন দিকে কেকারব, কোন দিকে ভেকরব, গগনে চাতকের কলরব, চতুর্দ্দিকে ঝঞ্ঝাবায়ু ও বৃষ্টিধারার গভীর শব্দ এবং স্থানে স্থানে গিরিনির্ঝরের পতনশব্দ। গগনমণ্ডলে আর চন্দ্রমা দৃষ্টিগোচর হয় না। নক্ষত্রগণ আর দেখিতে পাওয়া যায় না। এইরূপে বর্ষাকাল উপস্থিত হইয়া কালসর্পের ন্যায় চন্দ্রাপীড়ের পথরোধ করিল। ইন্দ্রচাপে তড়িদ্ গুণ সংযোগ করিয়া গভীর গর্জ্জন পূর্ব্বক বারিরূপ শর বৃষ্টি করিতে লাগিল। তড়িৎ যেন তর্জ্জন করিয়া উঠিল। বর্ষাকাল সমাগত দেখিয়া, চন্দ্রাপীড় সাতিশয় উদ্বিগ্ন হইলেন। ভাবিলেন, এ আবার কি উৎপাত; আমি প্রিয় সুহৃৎ ও প্রিয়তমার সমাগমে সমুৎসুক হইয়া, প্রাণপণে ত্বরা করিয়া যাইতেছি। কোথা হইতে জলদকাল দশ দিক্ অন্ধকার করিয়া বৈরনির্যাতনের আশয়ে উপস্থিত হইল? অথবা, বিদ্যুতের আলোকে পথ আলোকময় করিয়া, মেঘরূপ চন্দ্রাতপ দ্বারা রৌদ্র নিবারণ করিয়া, আমার সেবার নিমিত্তই বুঝি, জলদকাল সমাগত হইয়াছে। এই সময় পথ চলিবার সময়। এই স্থির করিয়া গমন করিতে আরম্ভ করিলেন।