পাতা:কাদম্বরী.djvu/১৩০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২৬
কাদম্বরী।

পরিণামে শ্রেয়ঃ হয় তাহার উপায় দেখ।” মদলেখার মুখে পিতা মাতার স্নেহ সংবলিত মধুর বাক্য শুনিয়া কাদম্বরীর উদ্বেগ দূর হইল।

ক্রমে বর্ষাকাল গত ও শরৎকাল আগত হইল। মেঘের অপগমে দিঙ্মণ্ডল যেন প্রসারিত হইল। মার্তণ্ড প্রচণ্ড কিরণদ্বারা পঙ্কময় পথ শুষ্ক করিয়া দিলেন। নদ, নদী, সরোবর ও পুষ্করিণীর কলুষিত সলিল নির্ম্মল হইল। মরালকুল নদীর সিকতাময় পুলিনে সুমধুর কলরব করিয়া কেলি করিতে লাগিল। গ্রামসীমায় পিঙ্গল কলমঞ্জরী ফলভরে অবনত হইল। শুকসারিকা প্রভৃতি পক্ষিগণ ধান্যশীষ মুখে করিয়া শ্রেণীবদ্ধ হইয়া গগনের উপরিভাগে অপূর্ব্ব শোভা বিস্তার করিল। কাশকুসুম বিকসিত হইল। ইন্দীবর, কহ্লার শেফালিকা প্রভৃতি নানা কুসুমের গন্ধযুক্ত বিশদবারিশীকরসম্পৃক্ত সমীরণ মন্দ মন্দ সঞ্চারিত হইয়া জীবগণের মনে আহ্লাদ জন্মিয়া দিল। সকল অপেক্ষা শশধরের প্রভা ও কমলবনের শোভা উজ্জ্বল হইল। এই কাল কি রমণীয়! লোকের গতায়াতের কোন ক্লেশ থাকে না। যে দিকে নেত্রপাত করা যায়, ধান্যমঞ্জরীর শোভা নয়ন ও মনকে পরিতৃপ্ত করে। জল দেখিলে আহ্লাদ জন্মে! চন্দ্রোদয়ে রজনীর সাতিশয় শোভা হয়। নভোমণ্ডল সর্ব্বদা নির্ম্মল থাকে। ভীষণ বর্ষাকালের অপগমে শরৎকালের মনোহর শোভা দেখিয়া কাদম্বরীর দুঃখভারাক্রান্ত চিত্তও অনেক সুস্থ হইল।

একদা মেঘনাদ আসিয়া কহিল, দেবি! যুবরাজের বিলম্ব হওয়াতে মহারাজ, মহিষী ও মন্ত্রী অতিশয় উদ্বিগ্ন হইয়া অনেক দূত পাঠাইয়াছেন। আমরা তাহাদিগকে সমুদায় বৃত্তান্ত শ্রবণ করাইয়া বাটী যাইতে অনুরোধ করাতে কহিল, আমরা এক বার যুবরাজের অবিকৃত আকৃতি দেখিতে অভিলাষ করি। এতদূর আসিয়া যদি তদবস্থাপন্ন তাঁহাকে দেখিয়া না যাই, মহারাজ কি বলিবেন, মহিষীকে কি বলিয়া বুঝাইব? এক্ষণে যাহা কর্ত্তব্য করুন। উপস্থিত বৃত্তান্ত শ্রবণ করিলে শ্বশুরকুলে শোক তাপের পরিসীমা থাকিবে না। এই চিন্তা করিয়া কাদম্বরী অত্যন্ত বিষণ্ণ হইলেন। বাস্পালকু [sic: বাস্পাকুল]