পাতা:কাদম্বরী.djvu/১৩৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৩৪
কাদম্বরী।

কাদম্বরীর চৈতন্যোদয় হইল। তখন নয়ন উন্মীলন পূর্ব্বক লজ্জায় অবনতমুখী হইয়া একে একে গুরুজনদিগকে প্রণাম করিলেন। বৈধব্যদশা শীঘ্র দূর হউক বলিয়া সকলে আশীর্ব্বাদ করিলেন। রাজা মদলেখাকে ডাকিয়া কহিলেন, বৎসে! তুমি বধূর নিকটে গিয়া কহ যে, আমরা কেবল দেখিবার পাত্র আসিয়া দেখিলাম। কিন্তু যেরূপ আচার করিতে হয় এবং এত দিন যেরূপ নিয়মে ছিলেন আমাদিগের আগমনে লজ্জার অনুরোধে যেন তাহার অন্যথা না হয়। বধূ যেন সর্ব্বদা বৎসের নিকটবর্ত্তিনী থাকেন। এই বলিয়া সঙ্গিগণ সমভিব্যাহারে আশ্রমের বহির্গত হইলেন।

আশ্রমের অনতিদূরে এক লতামণ্ডপে বাসস্থান নিরূপণ করিয়া সমুদায় নৃপতিগণকে ডাকাইয়া কহিলেন, ভ্রাতঃ! পূর্ব্বে স্থির করিয়াছিলাম, চন্দ্রাপীড়ের বিবাহ দিয়া তাঁহাকে রাজ্যভার সমর্পণ করিয়া, তৃতীয় আশ্রমে প্রবেশ করিব। এবং জগদীশ্বরের আরাধনায় শেষদশা অতিবাহিত হইবেক। আমার মনোরথ সফল হইল না বটে কিন্তু পুনর্ব্বার সংসারে প্রবেশ করিতে আস্থা নাই। তোমরা সহোদরতুল্য ও পরম সুহৃদ্। নগরে প্রতিগমন করিয়া সুশৃঙ্খল রূপে রাজ্য শাসন ও প্রজা পালন কর। আমি পরলোকে পরিত্রাণ পাইবার উপায় চিন্তা করি। যাহারা পুত্ত্র কিংবা ভ্রাতার প্রতি সংসারভার সমর্পণ করিয়া চরমে পরমেশ্বরের আরাধনা করিতে পারে তাহারাই ধন্য ও সার্থকজন্মা। এই অকিঞ্চিৎকর মাংসপিণ্ডময় শরীর দ্বারা যৎকিঞ্চিৎ ধর্ম্ম উপার্জ্জন হইলেও পরম লাভ বলিতে হইবেক। ধর্ম্মসঞ্চয় ব্যতিরেকে পরলোকে পরিত্রাণের উপায়ান্তর নাই। তোমরা এক্ষণে বিদায় হও এবং আপন আপন আলয়ে গমন করিয়া সুখে রাজ্যভোগ কর। আমি এই স্থানেই জীবনক্ষেপ করিব, মানস করিয়াছি। এই বলিয়া সকলকে বিদায় করিলেন এবং তদবধি তপস্বিবেশে জগদীশ্বরের আরাধনায় অনুরক্ত হইলেন। তরুমূলে হর্ম্ম্যবুদ্ধি, হরিণশাবকে সুতস্নেহ সংস্থাপন পূর্ব্বক সস্ত্রীক শুকনাস সহিত প্রতি