পাতা:কাদম্বরী.djvu/১৪৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪২
কাদম্বরী।

পারি বলিয়া ধরিয়াছে তাহাই সপ্রমাণ করা হয়। যদি কথা না কহি, তাহা হইলে শঠতা করিয়া কথা কহিতেছে না ভাবিয়া অধিক যন্ত্রণা দিতে পারে। যাহা হউক, বিষম সঙ্কটে পড়িলাম। কথা কহিলে কখন মোচন করিবে না, বরং না কহিলে অবজ্ঞা করিয়া ছাড়িয়া দিলেও দিতে পারে। এই স্থির করিয়া মৌনাবলম্বন করিলাম। কথা কহাইবার জন্য সকলে চেষ্টা পাইল, আমি কিছুতেই মৌনভঞ্জন করিলাম না। যখন কেহ আঘাত করে কেবল উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার করিয়া উঠি। চণ্ডালকন্যা ফল মূল প্রভৃতি খাদ্য দ্রব্য আমার সম্মুখে দিল, আমি খাইলাম না। পর দিনও ঐরূপ আহার সামগ্রী আনিয়া দিল। আমি ভক্ষণ না করাতে কহিল, পক্ষী ও পশুজাতি ক্ষুধা লাগিলে খায় না, ইহা অতি অসম্ভব বোধ হয়, তুমি জাতিস্মর, ভক্ষ্যাভক্ষ্য বিবেচনা করিতেছ। অর্থাৎ চণ্ডালস্পর্শে খাদ্য দ্রব্য অপবিত্র হইয়াছে বলিয়া আহার করিতেছ না। তুমি পূর্ব্বজন্মে যে থাক, এক্ষণে পক্ষিজাতি হইয়াছ। চণ্ডালস্পৃষ্ট বস্তু ভক্ষণ করিলে পক্ষিজাতির দুরদৃষ্ট জন্মে না। বিশেষতঃ আমি বিশুদ্ধ ফল মূল আনয়ন করিয়াছি, উচ্ছিষ্ট সামগ্রী আনি নাই। নীচজাতিস্পৃষ্ট ফল মূল ভক্ষণ করা কাহারও পক্ষে নিষিদ্ধ নহে। শাস্ত্রকারেরা লিখিয়াছেন, পানীয় কিছুতেই অপবিত্র হয় না। অতএব তোমার পান ভোজনে বাধা কি?

চণ্ডালকুমারীর ন্যায়ানুগত বাক্য শুনিয়া বিস্মিত হইলাম এবং ফলভক্ষণ ও জলপান দ্বারা ক্ষুৎপিপাসা শান্তি করিলাম; কিন্তু কথা কহিলাম না। ক্রমে যৌবন প্রাপ্ত হইলাম। একদা পিঞ্জরের অভ্যন্তরে নিদ্রিত আছি, জাগরিত হইয়া দেখি, পিঞ্জর সুবর্ণময় ও পক্কণপুর অমরপুর হইয়াছে। চণ্ডালদারিকাকে মহারাজ যেরূপ রূপলাবণ্যসম্পন্ন দেখিতেছেন ঐরূপ আমিও দেখিলাম। দেখিয়া অতিশয় বিস্ময় জন্মিল। সমুদায় বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা করিয়া জানিব ভাবিয়াছিলাম। ইতিমধ্যে মহারাজের নিকট আনীত হইয়াছি। ঐ কন্যা কে, কি নিমিত্ত চণ্ডালকন্যা বলিয়া পরিচয়