কহিলেন দেখ দেখ একটী শুকশিশু পথে পতিত রহিয়াছে। বোধ হয়, এই শাল্মলীতরুর শিখরদেশ হইতে পতিত হইয়া থাকিবে। ঘন ঘন নিশ্বাস বহিতেছে ও বারংবার চঞ্চুপুট ব্যাদান করিতেছে। বোধ হয়, অতিশয় তৃষ্ণাতুর হইয়া থাকিবে। জল না পাইলে আর অধিকক্ষণ বাঁচিবে না। চল, আমরা ইহাকে সরোবরে লইয়া যাই। জল পান করাইয়া দিলে বাঁচিলেও বাঁচিতে পারে। এই বলিয়া আমাকে ভূতল হইতে তুলিলেন। তাঁহার করস্পর্শে আমার উত্তপ্ত গাত্র কিঞ্চিৎ সুস্থ হইল। অনন্তর সরোবরে লইয়া গিয়া আমার মুখ উন্নত ও চঞ্চুপুট বিস্তৃত করিয়া অঙ্গুলির অগ্রভাগ দ্বারা বিন্দু বিন্দু বারি প্রদান করিলেন। জল পান করিয়া পিপাসাশান্তি হইল। পরে আমাকে স্নান করাইয়া নলিনীপত্রের শীতল ছায়ায় বসাইয়া রাখিলেন। অনন্তর ঋষিকুমারেরা স্নানান্তে অর্ঘ্য প্রদান পূর্ব্বক ভগবান্ ভাস্করকে প্রণাম করিলেন এবং আর্দ্র বস্ত্র পরিত্যাগ ও পবিত্র নূতন বসন পরিধান পূর্ব্বক আমাকে গ্রহণ করিয়া তপোবনাভিমুখে মন্দ মন্দ গমন করিতে লাগিলেন।
তপোবন সন্নিহিত হইলে দেখিলাম, তত্রস্থ তরু ও লতা সকল কুসুমিত, পল্লবিত ও ফলভরে অবনত হইয়া রহিয়াছে। এলা ও লবঙ্গলতার কুসুমগন্ধে দিক্ আমোদিত হইতেছে। মধুকর ঝঙ্কার করিয়া এক পুষ্প হইতে অন্য পুষ্পে বসিয়া মধু পান করিতেছে। অশোক, চম্পক, কিংশুক, সহকার, মল্লিকা, মালতী প্রভৃতি নানাবিধ বৃক্ষ ও লতার সমাবেশে এবং তাহাদিগের শাখা ও পল্লবের পরস্পর সংযোগে মধ্যে মধ্যে রমণীয় গৃহ নির্ম্মিত হইয়াছে। উহার অভ্যন্তরে দিনকরের কিরণ প্রবেশ করিতে পারে না। মহর্ষিগণ মন্ত্রপাঠপূর্ব্বক প্রজ্জ্বলিত অনলে ঘৃতাহুতি প্রদান করিতেছেন এবং প্রদীপ্ত অগ্নিশিখার উত্তাপে বৃক্ষের পল্লব সকল মলিন হইয়া যাইতেছে। গন্ধবহ হোমগন্ধ বিস্তারপূর্ব্বক মন্দ মন্দ বহিতেছে। মুনিকুমারেরা কেহ বা উচ্চৈঃস্বরে বেদ উচ্চারণ, কেহ বা