পাতা:কাদম্বরী.djvu/১৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২
কাদম্বরী৷

প্রশান্ত ভাবে ধর্ম্মশাস্ত্রের আলোচনা করিতেছেন। মৃগকদম্ব নির্ভয়চিত্তে বনের চতুর্দ্দিকে খেলিয়া বেড়াইতেছে। শুকমুখভ্রষ্ট নীবারকণিকা তরুতলে পতিত রহিয়াছে।

তপোবন দেখিয়া আমার অন্তঃকরণ আহ্লাদে পুলকিত হইল। অভ্যন্তরে প্রবেশিয়া দেখিলাম, রক্তপল্লবশোভিত রক্তাশোকতরুর ছায়ায় পরিষ্কৃত পবিত্র স্থানে বেত্রাসনে ভগবান্ মহাতপা মহর্ষি জাবালি বসিয়া আছেন। অন্যান্য মুনিগণ চতুর্দ্দিকে বেষ্টন করিয়া উপবিষ্ট রহিয়াছেন। মহর্ষি অতি প্রাচীন, জরার প্রভাবে মস্তকের জটাভার ও গাত্রের লোম সকল ধবলবর্ণ, কপালে ত্রিবলি, গণ্ডস্থল নিম্ন, শিরা ও পঞ্জরের অস্থি সকল বহির্গত এবং শ্বেতবর্ণ লোমে কর্ণবিবর আচ্ছাদিত। তাঁহার প্রশান্ত গভীর আকৃতি দেখিবামাত্র বোধ হয় যেন, তিনি করুণরসের প্রবাহ, ক্ষমা ও সন্তোষের আধার, শান্তি লতার মূল, ক্রোধভুজঙ্গের মহামন্ত্র, সৎপথের দর্শক এবং সৎস্বভাবের আশ্রয়। তাঁহাকে দেখিয়া আমার অন্তঃকরণে একদা ভয় ও বিস্ময়ের আবির্ভাব হইল। ভাবিলাম মহর্ষির কি প্রভাব! ইঁহার প্রভাবে তপোবনে হিংসা, দ্বেষ, বৈর, মাৎসর্য্য, কিছুই নাই। ভুজঙ্গেরা আতপতাপিত হইয়া শিখীর শিখাকলাপের ছায়ায় সুখে শয়ন করিয়া আছে। হরিণশাবকেরা সিংহশাবকের সহিত সিংহীর স্তন পান করিতেছে। করভ সকল ক্রীড়া করিতে করিতে শুণ্ড দ্বারা সিংহকে আকর্ষণ করিতেছে। মৃগকুল অব্যাকুলচিত্তে বৃকের সহিত একত্র চরিতেছে। এবং শুষ্ক বৃক্ষও মুকুলিত হইয়াছে। বোধ হয় যেন, সত্যযুগ কলিকালের ভয়ে পলাইয়া তপোবনে আসিয়া অবস্থিতি করিতেছে। অনন্তর ইতস্ততঃ দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া দেখিলাম, আশ্রমস্থিত তরুগণের শাখায় মুনিদিগের বল্কল শুখাইতেছে, কমণ্ডলু ও জপমালা ঝুলিতেছে এবং মূলদেশে বসিবার নিমিত্ত বেদি নির্ম্মিত হইয়াছে। বোধ হয় যেন, বৃক্ষ সকলও তপস্বিবেশ ধারণপূর্ব্বক তপস্যা করিতে আরম্ভ করিয়াছে।