পাতা:কাদম্বরী.djvu/২৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাদম্বরী।
২৫

প্রান্তে শিপ্রানদীর তীরে এক বিদ্যামন্দির প্রস্তুত করাইলেন। বিদ্যামন্দিরের এক পার্শ্বে অশ্বশালা ও নিম্নে ব্যায়ামশালা প্রস্তুত হইল; চতুর্দ্দিক্ উন্নত প্রাচীর দ্বারা পরিবৃত হইল। অশেষবিদ্যাপারদর্শী মহামহোপাধ্যায় অধ্যাপকগণ অতিযত্নে আনীত ও শিক্ষাপ্রদানে নিয়োজিত হইলেন। নরপতি শুভ দিনে স্বপুত্ত্র চন্দ্রাপীড় ও মন্ত্রিপুত্ত্র বৈশম্পায়নকে তাঁহাদিগের নিকটে সমর্পণ করিলেন। প্রতিদিন মহিষীর সহিত স্বয়ং বিদ্যামন্দিরে উপস্থিত হইয়া তত্ত্বাবধান করিতে লাগিলেন। রাজকুমার এরূপ বুদ্ধিমান্ ও চতুর ছিলেন যে, অধ্যাপকগণ তাঁহার নব নব বুদ্ধি-কৌশল দর্শনে চমৎকৃত ও উৎসাহিত হইয়া সমধিক পরিশ্রম স্বীকার পূর্ব্বক শিক্ষা দিতে লাগিলেন। তিনিও অনন্যমনা ও ক্রীড়াসক্তিরহিত হইয়া ক্রমে ক্রমে সমস্ত বিদ্যা অধ্যয়ন করিলেন। তাঁহার হৃদয়দর্পণে সমুদায় কলা সংক্রান্ত হইল। অল্পকালের মধ্যেই শব্দশাস্ত্র, বিজ্ঞানশাস্ত্র, রাজনীতি, ব্যায়ামকৌশল, অস্ত্র ও সঙ্গীত বিদ্যা, সর্ব্বদেশভাষা এবং কাব্য, নাটক, ইতিহাস প্রভৃতি সমুদায় শিখিলেন। ব্যায়ামপ্রভাবে শরীর এরূপ বলিষ্ঠ হইল যে, করভ সকল সিংহ দ্বারা আক্রান্ত হইলে যেরূপ নড়িতে পারে না, সেইরূপ তিনি ধরিলেও এক পা চলিতে পারিত না। ফলতঃ এরূপ পরাক্রান্ত ও শক্তিশালী হইলেন যে, দশজন বলবান্ পুরুষ যে মুদ্গর তুলিতে পারেন না, তিনি অবলীলাক্রমে সেই মুদ্গর ধারণ পূর্ব্বক ব্যায়াম করিতেন।

ব্যায়াম ব্যতিরেকে আর সকল বিদ্যায় বৈশম্পায়ন চন্দ্রাপীড়ের অনুরূপ হইলেন। শৈশবাবধি একত্র বিদ্যাভ্যাস প্রযুক্ত পরস্পরের অকৃত্রিম প্রণয় ও অকপট মিত্রতা জন্মিল। বৈশম্পায়ন ব্যতিরেকে রাজকুমার একমুহূর্ত্তও একাকী থাকিতে পারিতেন না। বৈশম্পায়ন সর্ব্বদা রাজকুমারের নিকটবর্ত্তী থাকিতেন। এই রূপে বিদ্যালয়ে বিদ্যাভ্যাস করিতে করিতে শৈশবকাল অতীত ও যৌবনকাল সমাগত হইল। চন্দ্রোদয়ে প্রদোষের যেরূপ রমণীয়তা