ভূষিত হইয়া মণিময় সিংহাসনে বসিয়া আছেন; সমাগত রাজগণ চতুর্দ্দিক বেষ্টন করিয়া রহিয়াছেন। অন্যান্য পর্ব্বতের মধ্যগত হইলে সুমেরুর যেরূপ শোভা হয়, রাজা সেইরূপ অপূর্ব্ব শ্রী ধারণ করিয়া সভামণ্ডপ উজ্জ্বল করিতেছেন। চণ্ডালকন্যা সভার শোভা দেখিয়া অতিশয় চমৎকৃত হইল এবং নৃপতিকে অনন্যমনা করিবার আশয়ে করস্থিত বেণুযষ্টি দ্বারা সভাকুট্টিমে এক বার আঘাত করিল। তালফল পতিত হইলে অরণ্যচারী হস্তিযূথ যেরূপ সেই দিকে দৃষ্টিপাত করে, বেণুযষ্টির শব্দ শুনিবামাত্র সেইরূপ সকলের চক্ষু রাজার মুখমণ্ডল হইতে অপসৃত হইয়া সেই দিকে ধাবমান হইল।
রাজাও সেই দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিলেন অগ্রে এক জন বৃদ্ধ, পশ্চাতে পিঞ্জরহস্ত একটী বালক এবং মধ্যে এক পরমসুন্দরী কুমারী আসিতেছে। কন্যার এরূপ রূপ লাবণ্য, যে কোন ক্রমেই তাহাকে চণ্ডালকন্যা বলিয়া বোধ হয় না। রাজা তাহার নিরুপম সৌন্দর্য্য ও অসামান্য সৌকুমার্য্য অনিমিষলোচনে অবলোকন করিয়া বিস্ময়াপন্ন হইলেন। ভাবিলেন, বিধাতা বুঝি হীনজাতি বলিয়া ইহাকে স্পর্শ করেন নাই, মনে মনে কল্পনা করিয়াই ইহার রূপ লাবণ্য নির্ম্মাণ করিয়া থাকিবেন। তাহা না হইলে এরূপ রমণীয় কান্তি ও এরূপ অলৌকিক সৌন্দর্য্য কি রূপে হইতে পারে। যাহা হউক, চণ্ডালের গৃহে এরূপ সুন্দরী কুমারীর সমুদ্ভব নিতান্ত অসম্ভব ও আশ্চর্য্যের বিষয়। এইরূপ ভাবিতেছিলেন এমন সময়ে কন্যা সম্মুখে আসিয়া বিনীত ভাবে প্রণাম করিল। বৃদ্ধ পিঞ্জর লইয়া কৃতাঞ্জলিপুটে সম্মুখে দণ্ডায়মান হইয়া বিনয়বচনে নিবেদন করিল মহারাজ! পিঞ্জরস্থিত এই শুক সকল শাস্ত্রের পারদর্শী, রাজনীতিপ্রয়োগ বিষয়ে বিলক্ষণ নিপুণ, সদ্বক্তা, চতুর, সকলকালাভিজ্ঞ; কাব্য নাটক ইতিহাসের মর্ম্মজ্ঞ ও গুণগ্রাহী। যে সকল বিদ্যা মনুষ্যেরাও অবগত নহেন সমুদয় ইহার কণ্ঠস্থ। ইহার নাম বৈশম্পায়ন। ভূমণ্ডলস্থ সমস্ত নরপতি অপেক্ষা আপনি বিদ্বান্