পাতা:কাদম্বরী.djvu/৬৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬০
কাদম্বরী।

দেশ দাও। যদি ইতর কন্যার ন্যায় লজ্জা, ধৈর্য্য, বিনয় ও কুলে জলাঞ্জলি দিয়া, জনাপবাদ অবহেলন ও সদাচার উল্লঙ্ঘন করিয়া, পিতা মাতা কর্ত্তৃক অননুজ্ঞাত হইয়া স্বয়ং অভিসারিকাবৃত্তি অবলম্বন করি, তাহা হইলে, গুরুজনের অতিক্রম ও কুলমর্য্যাদার উল্লঙ্ঘন জন্য অধর্ম্ম হয়। যদি কুলধর্ম্মের অনুরোধে মৃত্যু অঙ্গীকার করি তাহা হইলে প্রথমপরিচিত, স্বয়মাগত, কপিঞ্জলের প্রণয়ভঙ্গজন্য পাপ এবং আশাভঙ্গ দ্বারা সেই তপোধনযুবার কোন অনিষ্ট ঘটিলে ব্রহ্মহত্যা ও তপস্বিহত্যা জন্য মহাপাতকে লিপ্ত হইতে হয়।

এই কথা বলিতে বলিতে চন্দ্রোদয় হইল। নবোদিত চন্দ্রের আলোক অন্ধকারমধ্যে পতিত হওয়াতে বোধ হইল যেন, জাহ্নবীর তরঙ্গ যমুনার জলের সহিত মিলিত হইয়াছে। সুধাংশুসমাগমে যামিনী জ্যোৎস্নারূপ দশনপ্রভা বিস্তার করিয়া যেন আহ্লাদে হাসিতে লাগিল। চন্দ্রোদয়ে গাম্ভীর্য্যশালী সাগরও ক্ষুব্ধ হইয়া তরঙ্গরূপ বাহু প্রসারণ পূর্ব্বক বেলা আলিঙ্গন করে। সে সময়ে অবলার মন চঞ্চল হইবে আশ্চর্য্য কি? চন্দ্রের সহায়তা ও মলয়ানিলের অনুকূলতায় আমার হৃদয়স্থিত মদনানল প্রবল হইয়া জ্বলিয়া উঠিল। চন্দ্রের দিকে নেত্রপাত করিয়াও চারি দিকে মৃত্যুমুখ দেখিতে লাগিলাম। অন্ধকারে লক্ষ্য স্থির করিতে না পারিয়া কুসুমচাপ নিস্তব্ধ হইয়াছিল, এক্ষণে সময় পাইয়া শরাসনে শরসন্ধান পূর্ব্বক বিরহিণীদিগের অন্বেষণ করিতে লাগিল। আমিই উহার প্রথম লক্ষ্য হইলাম। নেত্রযুগল নিমীলিত ও অঙ্গ অবশ করিয়া মূর্চ্ছা অজ্ঞাতসারে আমাকে আক্রমণ করিল। তরলিকা সভয়ে ও সসম্ভ্রমে গাত্রে শীতল চন্দনজল সেচন পূর্ব্বক তালবৃন্ত দ্বারা বীজন করিতে লাগিল। ক্রমে চৈতন্য প্রাপ্ত হইয়া নয়ন উন্মীলন পূর্ব্বক দেখিলাম, তরলিকা বিষণ্ণ বদনে ও দীন নয়নে রোদন করিতেছে। আমি লোচন উন্মীলন করিলে আমাকে জীবিত দেখিয়া অতিশয় হৃষ্ট হইল, বিনয়বাক্যে কহিল, ভর্ত্তৃদারিকে!