পাতা:কাদম্বরী.djvu/৭৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭০
কাদম্বরী৷

পরিত্যাগ এবং অকিঞ্চিৎকর পদার্থের ন্যায় সাংসারিক সুখে জলাঞ্জলি প্রদান করিয়াছেন; ব্রহ্মচর্য্য অবলম্বন পূর্ব্বক তপস্বিনীবেশে জগদীশ্বরের আরাধনা করিতেছেন; অনন্যমনা হইয়া প্রাণেশ্বরের সহিত সমাগমের উপায় চিন্তা করিতেছেন। এতদ্ব্যতিরিক্ত বিশুদ্ধ প্রণয় পরিশোধের আর পন্থা কি?

শাস্ত্রকারেরা অনুমরণকে যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রণালী বলিয়া নির্দ্দেশ করেন উহা ব্যামোহমাত্র। মূঢ় ব্যক্তিরাই মোহবশতঃ ঐ পথে পদার্পণ করে। ভর্ত্তা উপরত হইলে তাঁহার অনুগমন করা মূর্খতা প্রকাশ করা মাত্র উহাতে কিছুই উপকার নাই। না উহা মৃত ব্যক্তির পুনর্জীবনের উপায়, না তাঁহার শুভলোকপ্রাপ্তির হেতু, না পরস্পর দর্শন ও সমাগমের সাধন। জীবগণ নিজ নিজ ধর্ম্মানুসারে শুভাশুভ লোক প্রাপ্ত হয়। সুতরাং অনুমরণ দ্বারা যে পরস্পর সাক্ষাৎ হইবে তাহার নিশ্চয় কি? লাভ এই, অনুমৃত ব্যক্তিকে আত্মহত্যাজন্য মহাপাপে লিপ্ত হইয়া ঘোর নরকে চিরকাল বাস করিতে হয়। বরং জীবিত থাকিলে সৎকর্ম্ম দ্বারা স্বীয় উপকার ও শ্রাদ্ধতর্পণাদি দ্বারা উপরতের উপকার করিতে পারা যায়, মরিলে কাহার কিছুই উপকার নাই। অনুমরণ পতিব্রতার লক্ষণ নয়। দেখ, রতি, পতির মরণের পর ত্রিলোচনের নয়নানলে আত্মার আহুতি প্রদান করেন নাই। শূরসেন রাজার দুহিতা পৃথা, পাণ্ডুর মরণোত্তর অনুমৃতা হন নাই। বিরাটরাজের কন্যা উত্তরা, অভিমন্যুর মরণে আপন প্রাণ পরিত্যাগ করেন নাই। ধৃতরাষ্ট্রের কন্যা দুঃশলা, জয়দ্রথের মরণোত্তর অর্জ্জুনের শরানলে আপনারে আহুতি দেন নাই। কিন্তু উঁহারা সকলেই পতিব্রতা বলিয়া জগতে বিখ্যাত। এইরূপ শত শত পতিপ্রাণা যুবতী পতির মরণেও জীবিত ছিলেন শুনিতে পাওয়া যায়। তাঁহারাই যথার্থ বুদ্ধিমতী ও যথার্থ ধর্ম্মের গতি বুঝিতে পারিয়াছিলেন। বিবেচনা করিলে স্বার্থপর লোকেরাই দুঃসহ বিরহযন্ত্রণা সহ্য করিতে না পারিয়া অনুমরণ অবলম্বন করে। কেহ বা অহঙ্কার প্রকাশের নিমিত্ত এই পথে