নয়নে ও গদ্গদ বচনে নানাপ্রকার বিলাপ ও অনুতাপ করিয়া তত্রস্থ পশুপক্ষীদিগকেও দুঃখিত এবং বৃক্ষদিগকেও পরিতাপিত করিয়াছিলেন। ঐ আশ্রমের অনতিদূরে পম্পা নামক সরোবর আছে। ঐ সরোবরের পশ্চিম তীরে ভগবান্ রামচন্দ্র শর দ্বারা যে সপ্ততাল বিদ্ধ করিয়াছিলেন তাহার নিকটে এক প্রকাণ্ড শাল্মলী বৃক্ষ আছে; বৃহৎ এক অজগর সর্প সর্ব্বদা ঐ বৃক্ষের মূলদেশে বেষ্টন করিয়া থাকাতে, বোধ হয় যেন, আলবাল রহিয়াছে। উহার শাখা প্রশাখা সকল এরূপ উন্নত ও বিস্তৃত, বোধ হয় যেন, হস্তপ্রসারণ পূর্ব্বক গগনমণ্ডলের দৈর্ঘ্য পরিমাণ করিতে উঠিতেছে। স্কন্ধদেশ এরূপ উচ্চ, বোধ হয় যেন, একবারে পৃথিবীর চতুর্দ্দিক অবলোকন করিবার আশয়ে মুখ বাড়াইতেছে। ঐ তরুর কোটরে, শাখাগ্রে, স্কন্ধদেশে ও বল্কলবিবরে কুলায় নির্ম্মাণ করিয়া শুক শারিকা প্রভৃতি নানাবিধ পক্ষিগণ সুখে বাস করে। তরু অতিশয় প্রাচীন; সুতরাং বিরলপল্লব হইয়াও পক্ষিশাবকদিগের দিবানিশি অবস্থিতি প্রযুক্ত সর্ব্বদা নিবিড়পল্লবাকীর্ণ বোধ হয়। কোন কোন পক্ষিশাবকের পক্ষোদ্ভেদ হয় নাই তাহাদিগকে ঐ বৃক্ষের ফল বলিয়া ভ্রান্তি জন্মে। পক্ষীরা রাত্রিকালে বৃক্ষকোটরে আপন আপন নীড়ে নিদ্রা যায়। প্রভাত হইলে আহারের অন্বেষণে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া গগনমার্গে উড্ডীন হয়। তৎকালে বোধ হয় যেন, হরিদ্বর্ণ দুর্ব্বাদলপরিপূর্ণ ক্ষেত্র আকাশমার্গ দিয়া চলিয়া যাইতেছে। তাহারা দিগ্দিগন্তে গমন করিয়া আহারদ্রব্য অন্বেষণ পূর্ব্বক আপনারা ভোজন করে এবং শাবকদিগের নিমিত্ত চঞ্চুপুটে করিয়া খাদ্য সামগ্রী আনে ও যত্নপূর্ব্বক আহার করাইয়া দেয়।
সেই মহীরুহের এক জীর্ণ কোটরে আমার পিতা মাতা বাস করিতেন। কালক্রমে মাতা গর্ভবতী হইলেন এবং আমাকে প্রসব করিয়া সূতিকাপীড়ায় অভিভূত হইয়া প্রাণত্যাগ করিলেন। পিতা তৎকালে বৃদ্ধ হইয়াছিলেন, আবার প্রিয়তমা জায়ার বিয়োগশোকে অতিশয় ব্যাকুল ও দুঃখিতচিত্ত হইলেন তথাপি