পাতা:কাব্যগ্রন্থ (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দুই বিঘা জমি

শুধু বিঘে দুই ছিল মাের ভুঁই, আর সব গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, “বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে।”
কহিলাম আমি “তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই;
চেয়ে দেখ মাের আছে বড়-জোর মরিবার মত ঠাঁই।”
শুনি’ রাজা কহে “বাপু, জানত হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দীঘে সমান হইবে টানা,—
ওটা দিতে হবে।”—কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, “করুন্ রক্ষে গরীবের ভিটেখানি।
সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সােনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে, এমনি লক্ষীছাড়া?”
আঁখি করি’ লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে,
কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, “আচ্ছা সে দেখা যাবে।”

পরে মাস দেড়ে ভিটেমাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে—
করিল ডিক্রি, সকলি বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।
এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি।
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
মনে ভাবিলাম মােরে ভগবান রাখিবে না মােহগর্ত্তে,
তাই লিখি’ দিল বিশ্ব-নিখিল দু-বিঘার পরিবর্ত্তে।

২৮৯