পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
কর্তার ইচ্ছায় কর্ম

মেচ্ছের তৈরি মদেরই বা কী আর মেচ্ছে। ছোওয়া জলেরই বা কীকর্তার ইচ্ছার উপর বরাত দিয়া সে বিচার তার চিরকালের মতো সারিয়া রাখিয়াছে। যদি বলি পানিপাড়ে নােংরা ঘটি ডুবাইয়া যে এল বালতিতে সইয়া ফিরিতেছে সেটা পানের অযােগ্য, আর পানিমিঞা ফিলটার হইতে যে জল আনিল সেটাই শুচি ও স্বাস্থ্যকর, তবে উত্তর শুনিব, ওটা তো তুচ্ছ যুক্তির কথা, কিন্তু ওটা তাে কর্তার ইচ্ছা নয়। যদি বলি, নাই হইল কর্তার ইচ্ছা, তবে নিমন্ত্রণ বন্ধ। শুধু অতিথিসংকার নয়, অন্ত্যেষ্টিসংকার পর্যন্ত অচল। এত নিষ্ঠুর অবদন্তি দ্বারা যাদের অতি সামান্য খাওয়াছোওয়ার অধিকার পর্যন্ত পদে পদে ঠেকানো হয়, এবং সেটাকে যারা কল্যাণ বলিয়াই মানে, তারা রাষ্ট্র ব্যাপারে অবাধ অধিকার দাবি করিবার বেলায় সংকোচ বােধ করে না কেন?

যখন আপন শক্তির মূলধন লইয়া জনসাধারণের কারবার না চলে তখন সকল ব্যাপারেই মানুষ দৈবের কাছে, এহের কাছে, পরের কাছে হাত পাতিয়া ভয়ে ভয়ে কাটায়। এই ভাবটার বর্ণনা যদি কোথাও খুব স্পষ্ট করিয়া ফুটিয়া থাকে তাহা বাংলার প্রাচীন মঙ্গলকাব্যে। চাদ সদাগরের মনের আদর্শ মহৎ, তাই যে দেবতাকে নিকৃষ্ট বলিয়া কিছুতে সে মানিতে চায় নাই বহু দুঃখে তারই শক্তির কাছে তাকে হার মানিতে হইল। এই যে শক্তি, এর সঙ্গে জ্ঞান বা ন্যায়ধর্মের যােগ নাই। মানির পাত্র যতই যথেচ্ছাচারী ততই সে ভয়ংকর, ততই তার কাছে তিস্তুতি। বিশ্বকর্তৃত্বের এই ধারণার সঙ্গে তখনকার রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের যােগ ছিল। কবিকঙ্কণের ভূমিকাতেই তার খবর মেলে। আইন নাই, বিচার নাই, জোর যার মুলুক তার ; প্রবলের অত্যাচারে বাধা দিবায় কোনাে বৈধ পথ নাই; দুর্বলের একমাত্র উপায় স্তবস্তুতি, ঘুষঘাষ এবং অবশেষে পলায়ন। দেবচরিত্র-কল্পনাতেও যেমন, সমাজেও তেমন,

৫৫