পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালি কালি মহাকালি, কালিকে পাপহারিণি।।

 যে যাহা চায় দিতে নাহি করে আন।
 প্রাণ কেহ নাহি চাহে তেঁই রহে প্রাণ।।
 তাহারে দেখিয়া সাধু দেব পুরন্দর।
 পুত্রহিতে মায়ায় ব্রাম্ভণ কলেবর।।
 কুন্ডল কবচ দান মাগিল তাহারে।
 সেইক্ষণে অঙ্গ কাটি দিল পুরন্দরে।।
 তীক্ষ্ণ ক্ষুরে কাটি দিল অঙ্গ আপনার।
 সেই হৈতে কর্ণ নাম ঘোষয়ে সংসার।।
 সন্তুষ্ট হইয়া ইন্দ্র বলে লহ বর।
 একাঘ্নী মাগিয়া নিল কর্ণ ধনুর্দ্ধর।।
 একাঘ্নী নামেতে অস্ত্র জানে ত্রিভুবন।
 যাহারে প্রহারে তার অবশ্য মরণ।।
 কর্ণ নাম দিয়া ইন্দ্র গেল নিজপুর।
 সেই হৈতে হৈল কর্ণ ঘোষে তিনপুর।।
 কুন্তী ভোজনন্দিনী আছিল পিত্রালয়ে।
 সয়ংবর করিল সে যৌবন সময়ে।।
 নিমন্ত্রিয়া আনাইল যত রাজগণে।
 আইল সকল রাজা তার নিমন্ত্রণে।।
 বসিল সকল রাজা যার যেই স্থান।
 মধ্যেতে বসিল পাণ্ডু ইন্দ্রের সমান।।
 গ্রহগণ মধ্যে যেন শোভে দিনকর।
 পাণ্ডু-তেজে আচ্ছাদিল যত নরবর।।
 পাণ্ডুরে দেখিয়া কুন্তী উল্লসিত মন।
 গলে মাল্য দিয়া তাঁরে করিল বরণ।।
 ভোজরাজ পাণ্ডুর করিল সুসম্মান।
 কুন্তীরে লইয়া পাণ্ডু আইল নিজস্থান।।
 পুরন্দর কোলে যেন পুলোমা-নন্দিনী।
 রজনীপতি কোলে শোভিতা রোহিণী।।
 হস্তিনানগরে লোক হৈল হরষিত।
 স্থানে স্থানে নগরে হইল নৃত্যগীত।।
 তবে কতদিনে ভীষ্ম বিচারিয়া মনে।
 বংশবৃদ্ধিহেতু আর বিবাহ কারণে।।
 শল্য নামে রাজা আছে মদ্রের ঈশ্বর।
 পৃথিবীতে বিখ্যাত অতুল গুণধর।।
 তাহার ভগিনী আছে পরমা সুন্দরী।
 বার্ত্তা পেয়ে গেল ভীষ্ম তাহার নগরী।।
 শল্য রাজা শুনিল সে ভীষ্মের আগমন।
 অগ্রসরি নিজ গৃহে লৈল ততক্ষণ।।
 বিধিমতে গঙ্গাপুত্রে পুজিল তখন।
 জিজ্ঞাসিল কোন কার্য্যে হেথা আগমন।।
 ভীষ্ম বলে তুমি রাজা বিখ্যাত সংসার।
 বন্ধু করিবারে ইচ্ছা হইয়াছে আমার।।
 তোমার ভগিনী আছে কহে সর্ব্বজন।
 ভ্রাতার নন্দনে মম করহ অর্পণ।।
 হাসিয়া বলেন শল্য বিধি মিলাইল।
 কে জানে এমত ভাগ্য আমার যে ছিল।।
 একমাত্র নিবেদন আছয়ে আমার।
 পূর্ব্বাপর আছয়ে আমার কুলাচার।।
 ঠেলিতে না পারি কৈল পিতামহ পিতা।
 তোমারে কহিতে যোগ্য নহে সেই কথা।।
 শল্যের বচনে ভীষ্ম বুঝিল কারণ।
 কুলধর্ম্মরক্ষা হেতু কর্তব্য যতন।।
 ইন্দ্র প্রতি প্রজাপতি বলিল বচন।
 দোষকর্ম্ম কুলধর্ম্ম না করি লঙ্ঘন।।
 আপনার কুলধর্ম্ম করিবা পালন।
 নাহিক তাহাতে দোষ বেদের বচন।।
 এত বলি ভীষ্ম দিল অমূল্য রতন।
 সাত কুম্ভ পূর্ণ করি দিলেন কাঞ্চন।।
 অশ্ব রথ গজ দিল বিচিত্র বসন।
 ধনলাভে প্রীতি হৈল মদ্রের নন্দন।।
 নানা রত্নে ভূষিয়া ভগিনী আনি দিল।
 মাদ্রী লৈয়া ভীষ্মদেব নিজদেশে গেল।।
 পাণ্ডুর বিবাহে মহা উৎসব করিল।
 দেখিয়া মাদ্রীর রূপ পাণ্ডু হৃষ্ট হৈল।।
 যুগল বনিতা পাণ্ডু দেখিয়া সমান।
 দুই ভার্য্যা সমভাবে নাহি ভেদজ্ঞান।।
 তবে পাণ্ডু কতদিনে সবার অগ্রেতে।
 প্রতিজ্ঞা করিল দিগবিজয় করিতে।।
 পদাতি রথাশ্বগজ চতুরঙ্গ দলে।
 সাজিয়া পশ্চিম দিকে চলে মহাবলে।।
 দশার্ণ দেশের রাজা পূর্ব অপরাধী।
 তাহারে জিনিয়া পায় বহুরত্ন নিধি।।