পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেদ-বেদান্ত-বিদ্যাস্থানেভ্য এব চ।।

 এত বলি বিদুর করিল আলিঙ্গন।
 স্নেহবশে শিরে ধরি করিল চুম্বন।।
 নয়নের নীর ঝরে ভাবে গদগদ।
 যুধিষ্ঠির পঞ্চ ভাই প্রণমিল পদ।।
 বাহুড়িয়া বিদুর চলিল নিজালয়।
 বারণা গেলেন পঞ্চ পাণ্ডুর তনয়।।
 প্রবেশ করেন গিয়া নগর ভিতর।
 অগ্রসরি নিল যত নগরের নর।।
 হেনকালে পুরোচন করে নমষ্কার।
 ভূমিষ্ঠ হইয়া যেন রাজ-ব্যবহার।।
 করযোড় করি দুষ্ট পুরোচন কহে।
 এথায় রহিলে কেন চল নিজ গৃহে।।
 তব আগমন শুনি করিনু মণ্ডন।
 বিলম্ব না কর তুমি দিন শুভক্ষণ।।
 এত শুনি হৃষ্ট হৈয়া পঞ্চ সহোদর।
 জননী সহিত গিয়া প্রবেশেন ঘর।।
 বিচিত্র নির্ম্মান মনোহর সে আলয়।
 দেখি হৃষ্ট হইলেন ধর্ম্মের তনয়।।
 তবে কতক্ষণে পুরী করি নিরীক্ষণ।
 ভীমে দেখি যুধিষ্ঠির বলেন বচন।।
 গৃহের পরীক্ষা, দেখি লও বৃকোদর।
 মম মনে বিশ্বাস না হয় এই ঘর।।
 বৃকোদর নিলেন সে ঘরের আঘ্রাণ।
 জানিলেন ঘর জতুঘৃতের নির্ম্মাণ।।
 বৃকোদর বিস্মিত কহেন যুধিষ্ঠিরে।
 জৌঘৃত-সরিষা-তৈল গন্ধ পাই ঘরে।।
 প্রত্যক্ষ অগ্নির ঘর ইথে নাহি আন।
 আমা সবা দহিবারে করেছে নির্ম্মাণ।।
 পথে দেখিলাম যত অনুচরগণ।
 এই সব দ্রব্য এনেছিল অনুক্ষণ।।
 যুধিষ্ঠির বলেন সে প্রমাণ হইল।
 আসিতে যবনভাষে বিদুর বলিল।।
 বিশ্বাস করিয়া সবে থাকিলে এ ঘরে।
 অচেতন হইবে সকলে নিদ্রাভরে।।
 তখন অনল ইথে দিবে পুরোচন।
 হেন বুদ্ধি করিয়াছে দুষ্ট দুর্য্যোধন।।
 ভীম বলিলেন ত্যাজি অনলের ঘর।
 পুনরাপি যাই চল হস্তিনানগর।।
 যুধিষ্ঠির বলিলেন নহে সুবিচার।
 এই কথা লোকে ভাই হইবে প্রচার।।
 দুর্যোধন বিচার করিবে নিজ চিতে।
 নিশ্চয় আমার কার্য্য পারিল জানিতে।।
 সৈন্যগণ সাজি দুষ্ট করিবেক রণ।
 তার হাতে সর্ব্ব সৈন্য সর্ব্ব রত্ন ধন।।
 কি কার্য্য বিবাদে ভাই না যাব তথায়।
 নির্ধন নিঃসৈন্য আমি নাহিক সহায়।।
 সাবধান হৈয়া এই গৃহেতে বঞ্চিব।
 আমরা জানি যে ইহা কারে না বলিব।।
 পঞ্চভাই একত্রে না র'ব কোন স্থলে।
 হেথা হৈতে পলাইব কতদিন গেলে।।
 অনক্ষণ মৃগয়া ক'রিব পঞ্চজন।
 পথ ঘাট জ্ঞাত হব' বন উপবন।।
 সব জ্ঞাত হব' আমি কেহ নাহি জানে।
 হেনমতে বিচার রহিল ছয় জনে।।
 হেতায় আকুল চিত্ত বিদুর সুমতি।
 নিরন্তর অনুশোচে পাণ্ডবের প্রতি।।
 কি মতে বাহির হবে জৌগৃহ হইতে।
 নিশ্চয় যাইবে কেহ না পারে লক্ষিতে।।
 বিচারিয়া বিদুর করিল অনুমান।
 খনক আনিল জানে সুরঙ্গ নির্ম্মাণ।।
 খনক সুবুদ্ধি বড় বিদুরে বিশ্বাস।
 সকল কহিয়া পাঠাইল ধর্ম্মপাশ।।
 খনক করিল যুধিষ্ঠিরে নমষ্কার।
 ধীরে ধীরে কহে বিদুরের সমাচার।।
 পাথাইল বিদুর আমারে তব কাছে।
 ভূমি খনিবার বিদ্যা আমার যে আছে।।
 একান্তে কহিল মোরে ডাকি নিজ পাশ।
 দুর্য্যোধন-লোক বলি না যাবে বিশ্বাস।।
 অতএব এই চিহ্ন কহিল আমারে।
 আসিতে কি ম্লেচ্ছভাষে কহিল তোমারে।।
 যুধিষ্ঠির শুনিয়া করিলেন আশ্বাস।
 জানিলাম তোমারে নাহিক অবিশ্বাস।।