পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেব্যুবাচ।--দত্তন্তে নির্ম্মং জ্ঞানং কুমতিধ্বংস কারণং।

 কালেতে অবশ্য জয় লভে ধর্ম্মিজন।
 সুখ দুঃখ কতকাল দৈবের লিখন।।
 কৃষ্ণের এতেক বাক্য শুনি যদুগণ।
 সবাই ত্যাজিল লক্ষ্য বিন্ধিবার মন।।
 মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
 কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।
     ------
 সকলকে লক্ষ্য-বিন্ধিবার জন্য ধৃষ্টদুম্নের অনুমতি।
   পুনঃ পুনঃ ধৃষ্টদ্যুম্ন স্বয়ংবর স্থলে।
 লক্ষ্য বিন্ধিবারে বলে ক্ষত্রিয় সকলে।।
 তাহা শুনি উঠিলেন কুরুবংশপতি।
 ধনুক নিকটে যান ভীষ্ম মহামতি।।
 তুলিয়া ধনুকে ভীষ্ম দিয়া বাম জানু।
 হুলে ধরি নোয়াইয়া ধরে মহাধনু।।
 মহাশব্দে মোহিত হইল সর্ব্বজন।
 উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন গঙ্গার নন্দন।।
 শুনহ পাঞ্চাল আর যত রাজভাগ।
 সবে জান আম দার করিয়াছি ত্যাগ।।
 কন্যায় আমার কিছু নাহি প্রয়োজন।
 আমি লক্ষ্য বিন্ধিলে লইবে দুর্য্যোধন।।
 এত বলি ভীষ্ম বাণ যুড়িল ধনুকে।
 হেনকালে শিখণ্ডী দেখিল সম্মুখে।।
 ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা আছে খ্যাত চরাচর।
 অমঙ্গল দেখিলেই ছাড়ে ধনুঃশর।।
 শিখণ্ডী দ্রুপদপুত্র নপুংসক জাতি।
 তার মুখ দেখি ধনু থুল মহামতি।।
 তবে ত সভাতে ছিল যত ক্ষত্রগণ।
 পুনঃ ডাক দিয়া বলে পাঞ্চাল-নন্দন।।
 ব্রাম্ভণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য শূদ্র নানা জাতি।
 যে বিন্ধিবে সেই লবে কৃষ্ণা গুণবতী।।
 এত শুনি উঠিলেন দ্রোণ মহাশয়।
 শিরেতে উষ্ণীষ শোভে শুভ্র অতিশয়।।
 শুভ্র মলয়জে লিপ্ত শুভ্র সর্ব্ব অঙ্গ।
 হস্তে ধনুর্ব্বণ শোভে পৃষ্ঠেতে নিষঙ্গ।।
 ধনুক লইয়া দ্রোণ বলেন বচন।
 যদি আমি এই লক্ষ্য বিন্ধি কদাচন।।
 আমা যোগ্য নহে এই দ্রুপদকুমারী।
 সখার কুমারী হয় আমার ঝিয়ারী।।
 দুর্য্যোধনে কন্যা দিব যদি লক্ষ্য হানি।
 এত বলি ধরিয়া তুলিল বাম পাণি।।
 টঙ্কারিয়া গুণ দিয়া বলেন আচার্য্য।
 খসাইয়া দিব গুণ এ কোন আশ্চর্য্য্।।
 বিন্ধিতে যে শক্ত তার গুণেতে কি ভয়।
 দুই স্থানে অধিকারী দুর্য্যোধন হয়।।
 তবে দ্রোণ লক্ষ্য দেখে জলের ছায়াতে।
 অপূর্ব্ব রচিল লক্ষ্য দ্রুপদ নৃপতে।।
 পঞ্চক্রোশ উর্দ্ধেতে সুবর্ণ মৎস আছে।
 তার অর্দ্ধপথে রাধাচক্র ফিরিতেছে।।
 নিরবধি ফিরে চক্র অদ্ভুত নির্ম্মাণ।
 মধ্যে ছিদ্র আছে মাত্র যায় এক বাণ।।
 উর্দ্ধদৃষ্টি করে মৎস না পাই দেখিতে।
 জলেতে দেখিতে পাই চক্রছিদ্রপথে।।
 অধোমুখ চাহিয়া থাকিবে মৎস্য লক্ষ্য।
 উর্দ্ধে বাণ বিন্ধিবেক শুনিতে অশক্য।।
 টানিয়া ধনুক দ্রোণ জলছায়া চায়।
 দেখিয়া হৃদয়ে চিন্তেন যে যদুরায়।।
 পরশুরামের শিষ্য দ্রোণ মহাশয়।
 নানা বিদ্যা অস্ত্রে শাস্ত্রে পূর্ণিত হৃদয়।।
 বিশেষ সবার গুরু দ্রোণ ধনুর্ব্বেদ।
 সকল লোকেতে খ্যাত সৃষ্টি করে ভেদ।।
 লক্ষ্য বিন্ধিবারে এ বিচিত্র নহে কথা।
 এক্ষণে বিন্ধিবে লক্ষ্য নাহিক অন্যথা।।
 সুদর্শণ চক্রে আচ্ছাদিল চক্রধর।
 মৎস্য-লক্ষ্যে ঢাকি রহে সেই চক্রবর।।
 তবে দ্রোণাচার্য্য বাণ আকর্ণ পূরিয়া।
 চক্রছিদ্রপথে বিন্ধে জলেতে চাহিয়া।।
 মহাশব্দে উঠে বাণ গগনমণ্ডলে।
 সুদর্শনে ঠেকিয়া পড়িল ভূমিতলে।।
 লজ্জিত হইয়া দ্রোণ ছাড়িল ধনুক।
 সভাতে বসিল গিয়া হ'য়ে অধোমুখ।।
 বাপের দেখিয়া লজ্জা ক্রোধে তবে দ্রোণি।
 তুলিয়া লইল ধনু ধরি বামপাণি।।