পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোবিন্দং পুণ্ডরীকাক্ষং গোপকন্যাঃ সহস্রশঃ।।

 শীঘ্র যাহ ভীমসেন আনহ অর্জ্জুনে।
 দ্বন্দ্ব করিবারে কিছু নাহি প্রয়োজন।।
 পাইয়া জ্যেষ্ঠের আজ্ঞা ধায় বৃকোদর।
 উপাড়িয়া নিল এক দীর্ঘ তরুবর।।
 দশযোজনোচ্চ তরু নিষ্পত্র করিয়া।
 বায়ু বাগে সৈন্যমধ্যে প্রবেশিল গিয়া।।
 ক্ষত্রগণ চেষ্টা দেখি ক্রোধে দ্বিজগণ।
 পাছে পাছে ভীমের ধাইল সর্ব্বজন।।
 হের দেখ ক্ষত্রিয় পাপিষ্ঠ দুরাচার।
 সভামধ্যে লক্ষ্য দ্বিজ বিন্ধিল আমার।।
 লক্ষ্য বিন্ধিবারে শক্য নহিল তখন।
 এবে দ্বন্দ্ব কর কেন একা ত ব্রাম্ভণ।।
 এমত অন্যায় বল কার প্রাণে সয়।
 যুদ্ধ করি প্রাণ দিব দ্বিজ সব কয়।।
 এত বলি দ্বিজ দণ্ড লইল সে করে।
 মৃগচর্ম্ম দৃঢ় করি বান্ধে কলেবরে।।
 লক্ষ লক্ষ ব্রাম্ভণ ধাইল বায়ুবেগে।
 হাতে জাঠা করিয়া ভুপতিগণ আগে।।
 দেখিয়া বলেন পার্থ করি কৃতাঞ্জলি।
 মাথায় লইয়া দ্বিজগণ পদধুলি।।
 তোমার আইলে দ্বন্দ্বে কিসের কারণ।
 দণ্ডাইয়া কৌতুক দেখহ সর্ব্বজন।।
 যাহারে করহ ভস্ম মুখের বচনে।
 তাহার সহিত দ্বন্দ্ব নহে সুশোভনে।।
 তোমা সবাকার মাত্র চরণপ্রসাদে।
 দুষ্টক্ষত্রগণেরে মারিব অপ্রমাদে।।
 যে প্রকার দুষ্টাচার করিয়াছে সবে।
 তাহার উচিত শাস্তি এইক্ষণে পাব।।
 এত বলি নিবারণ করি দ্বিজগণ।
 রাজগণ প্রতি ধায় ইন্দ্রের নন্দন।।
 হাসিয়া বলেন রাম দেখ ভগবান্।
 পূর্ব্বে যাহা কহিয়াছি দেখ বিদ্যমান।।
 এই দেখ লক্ষ রাজা একত্র হইয়া।
 বেড়িলেক অর্জ্জুনেরে সসৈন্য লইয়া।।
 একা পার্থ প্রবোধিবে কত শত জনে।
 প্রতিকার ইহার না দেখি যে নয়নে।।
 প্রতিজ্ঞা করিল মিলে সব রাজাগণে।
 দ্বিজে মারি কন্যা দিবে রাজা দুর্যোধনে।।
 রামের বচন শুনি দুঃখিত গোবিন্দ।
 নয়নযুগল যেন বিকচার বিন্দ।।
 ক্ষণেক রহিয়া কৃষ্ণ করেন উত্তর।
 যা বলিলা সত্য দেব যাদব-ঈশ্বর।।
 এক লক্ষ ভূপতি বেড়িল একজনে।
 কোথায় জিনিবে সেই মনুষ্য-পরাণে।।
 অর্জ্জুনের পরাক্রম জ্ঞাত নহ তুমি।
 মুহূর্ত্তেকে নিবারয়ে সসাগরা ভূমি।।
 মনুষ্য যতেক আর সুরাসুর-সহ।
 অর্জ্জুনের সঙ্গে যদি করয়ে কলহ।।
 দুর্গম বনেতে যেন মদমত্ত বাঘ।
 তারে কি করিতে পারে রাজগণ ছাগ।।
 কহিলা যে প্রতিজ্ঞা করিল রাজগণে।
 দ্বিজ মারি কন্যা দিবে রাজা দুর্য্যোধনে।।
 নর কোথা চন্দ্র ধরিবারে পারে।
 ব্যাঘ্রমুখে খাদ্য সে শৃগাল কোথা হরে।।
 তবে যদি অর্জ্জুনের নূন্যতা দেখিব।
 সুদর্শণ চক্রে আমি সবারে ছেদিব।।
 শুনি রাম হইলেন সভয় অন্তর।
 নিজ শিষ্য দুর্য্যোধন অতি প্রিয়তর।।
 পাণ্ডবের শত্রু ক্রোধ আছয়ে অন্তরে।
 এই ছল করি কৃষ্ণ পাছে বধ করে।।
 চিন্তিয়া বলেন কৃষ্ণে রেবতীরমণ।
 আমা সবাকার দ্বন্দ্বে নাহি প্রয়োজন।।
 বিশেষ আপনি বল পার্থ মহাবল।
 মুহুর্ত্তেকে জিনিবেক ভুপতি সকল।।
 সেই কথা পরীক্ষা করিব এইক্ষণে।
 অভ্যন্তরে থাকি যুদ্ধ দেখহ আপনে।।
 গোবিন্দ বলেন আমি না যাইব রণে।
 তব আজ্ঞা লঙ্ঘন না করিব কখনে।।
 অপূর্ব্ব সমর দেখি যতেক অমর।
 অর্জ্জুন কারণ হৈল চিন্তিত অন্তর।।
 পুত্রের সাহায্য হেতু দেবরাজ তূর্ণ।
 পাঠাইয়া দিল তূণ অস্ত্রগণপূর্ণ।।