এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
স্ত্রস্ত-ধম্মিল্ল-বসনা মদস্খলিত-ভাষণাঃ।।
দোঁহারে বেড়িয়া সবে থাকে চতুর্ভিতে। যাবৎ না শুনি ক্ষত্র নাহি এ দেশেতে।। পার্থ বলে সে ভয় না কর দ্বিজগণ। আজি যাহ কালি সবে করিব মিলন।। অনেক প্রকারে পুনঃ পুনঃ বুঝইল। তথাপিও দ্বিজগণ সঙ্গ না ছাড়িল।। দ্বিজগণ মধ্যে ছিল ধৌম্য তপোধনে। ডাকিয়া নিভৃতে কহে সব দ্বিজগণে।। কোথাকারে যাহ সবে এ দোঁহা সংহতি। চিনিলে কি এই দোঁহা হয় কোন্ জাতি।। কিবা দৈত্য কিবা দেব রাক্ষস কিন্নর। কাহার তনয় দোঁহে কোন্ দেশে ঘর।। ইহার সংহতি তবে কোন্ প্রয়োজন। যথা ইচ্ছা তথাকারে করুক গমন।। ধৌমবাক্য শুনি সবে ভয় হৈল মনে। দোঁহাকার সংহতি ছাড়িল দ্বিজগণে।। দ্বিজগণ মধ্যে বীর ধৃষ্টদ্যুম্ন ছিল। ভগিনীর মমত্ব কদাচ না ছাড়িল।। গুপ্তবেশে পাছে পাছে চলিল সংহতি। মেঘে ঘোর অন্ধকার কৃষ্ণপক্ষ রাতি।। হেনকালে যুধিষ্টির সঙ্গে দুই ভাই। যাইতে ভার্গবগৃহে মলেন তথাই।। হেথা কুম্ভকার গৃহে ভোজের নন্দিনী। সমস্ত দিবস গেল হইল রজনী।। না দেখিয়া পুত্রগণে কান্দেন ব্যাকুলে। ক্ষণে উঠে ক্ষণে বৈসে ভাষে অশ্রুজলে।। এতক্ষণ না আইল কি হেতু না জানি। কার সঙ্গে দ্বন্দ্ব ভীম করিছে আপনি।। অনুক্ষণ দ্বন্দ্ব বিনা ভীম নাহি জানে। আজি বুঝি বিরোধ করিল কার সনে।। এই হেতু দ্বিজে কিবা মারে ক্ষত্রগণ। বহু বিলাপিয়া কুন্তী করেন রোদন।। হেনকালে উত্তরিল পঞ্চ সহোদর। হৃষ্টচিত্তে মায়েরে ডাকিছে বৃকোদর।। আজি মাতা সমস্ত দিন দুঃখ পাইলা। উপবাসে একাকিনী গৃহেতে রহিলা। অনেক কলহ আজি হইল জননী। সে কারণে হৈল মাতা এতেক রজনী।। রাত্রিতে মিলিল ভিক্ষা দেখ আসি মাতা। কুন্তী বলে বাঁটিয়া লহ রে পঞ্চ ভ্রাতা।। তোমা সবাকার বাক্য কর্ণে শুনি সুধা। আনন্দ-সাগরে ডুবি গেল মম ক্ষুধা।। আয়রে সোনার চাঁদ ওরে বাছাধন। নিকটে আইস, দেখি সবার বদন।। এত বলি শীঘ্র কুন্তী হইয়া বাহির। একে একে চুম্ব দিল সবাকার শির।। সবার পশ্চাতে দেখে দ্রুপদ-নন্দিনী। পূর্ণ শশধরমুখী গজেন্দ্রগামিনী।। তারে দেখি কুন্তী জিজ্ঞাসেন পঞ্চ সুতে। কেবা এ সুন্দরী দেখি সবার পশ্চাতে।। ভীম বলে জননী এ দ্রুপদ-দুহিতা। একচক্রা নগরে শুনিলে যার কথা।। ইহার কারণে বহু বিরোধ হইল। তোমার প্রসাদে জয় সর্ব্বত্র জন্মিল।। এই ভিক্ষা হেতু মাতা হইল রজনী। অন্ন ভিক্ষা করিলে মিলিত অন্নপানী।। কুন্তী বলিলেন শুন কহি পঞ্চ ভাই। কহিলাম কি কথা অগ্রেতে জানি নাই।। কেন না বল পুত্র কি কর্ম্ম করিলা। কন্যারে আনিয়া কেন ভিক্ষা যে বলিলা।। ভিক্ষা জানি বলি বাঁটি খাও পঞ্চজন। কিমতে আমার বাক্য করিবা লঙ্ঘন।। এত বলি দ্রৌপদীরে কুন্তী ধরি হাতে। যুধিষ্ঠির অগ্রে কহে কান্দিতে কান্দিতে।। সর্ব্ব ধর্ম্মাধর্ম্ম তাত তোমাতে গোচর। শুনিয়াছ আমি কহিলাম যে উত্তর।। পুত্র হৈয়া আমা বাক্য লঙ্ঘিবা কি মতে। না লঙ্ঘিলে বিপরীত হইবে শুনিতে।। যেমতে লঙ্ঘন তাত নহে মম বাণী। ধর্ম্মচ্যুত নাহে যেন দ্রুপদ-নন্দিনী।। মায়ের বচন শুনি ধর্ম্মের নন্দন। ব্যাসের বচন পূর্ব্বে হইল স্মরণ।।