পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রার্থনা মন্ত্র-- কার্ত্তিকেয় মহাভাগ গৌরী-হৃদয়-নন্দন।

 ফিরাও দারুক রথ ডাকে ক্ষত্রগণে।
 না দিয়া প্রবোধ তারে যাইব কেমনে।।
 দারুক বলিল পার্থ কহ কি অদ্ভুত।
 গোবিন্দ অধিক দেখ গোবিন্দের সুত।।
 ইহা সব সহ যুদ্ধ না হয় উচিত।
 সময় বুঝিয়া যুদ্ধ আছে ক্ষত্রনীত।।
 এ কর্ম্ম করিতে শক্ত নহিবে অর্জ্জুন।
 পলাইতে যথা চাহ বলহ এক্ষণ।।
 কৃষ্ণপুত্রে প্রহারিয়া চড়ি এই রথে।
 মম শক্তি নহিবে তুরঙ্গ চালাইতে।।
 পার্থ বলে দ্বারুক এ নহে ব্যবহার।
 যুদ্ধ হেতু ডাকিতেছে পশ্চাতে আমার।।
 হেন অপযশ মম ঘুষিবে ভুবনে।
 শৃগালের প্রায় যাব কি আজ জীবনে।।
 কৃষ্ণপুত্র আসুক আপনি কৃষ্ণ আসে।
 কিম্বা যুধিষ্ঠির ভীম সমরে প্রবেশে।।
 যুদ্ধ হেতু আমারে ডাকিলে ক্ষত্র হৈয়া।
 যে হউক সংগ্রাম করিব বাহুড়িয়া।।
 নিশ্চয় জানিনু তুমি যদুকুল-হিত।
 নারিবে সারথি-কর্ম্ম করিতে উচিত।।
 অবিশ্বাস তোমাতে বিশেষ রনস্থলি।
 ফেলহ প্রবোধ বাড়ি ছাড় কাড়িয়ালি।।
 চালাইব রথ আমি করিব সমর।
 এত বলি ছড়ি কাড়ি লইল সত্বর।।
 পাশ অস্ত্রে দারুকেরে রাখিয়া বন্ধনে।
 বান্ধিলেন রথস্তম্ভে আপন দক্ষিণে।।
 এক পদে কাড়িয়ালি আর পদে বাড়ি।
 ধনুর্গুণ টঙ্কারিয়া রহিলা বাহুড়ি।।
 ভদ্রা বলে মহাবীর এত কষ্ট কেনে।
 আজ্ঞা কর আমারে চালাই অশ্বগণে।।
 তথা হৈতে চালাইয়া দিল অশ্ববর।
 রথের চঞ্চল গতি অতি মনোহর।।
 দৃষ্টিমাত্রে যতেক যাদব বীরগণ।
 মুর্চ্ছা হৈয়া রণেতে পড়িল সর্ব্বজন।।
 বিদ্যুৎবরণী ভদ্রা পার্থ জলধর।
 বিদ্যুতের প্রায় পৈশে মেঘের ভিতর।।
 অনেক মারেন সৈন্য পার্থ ধনুর্দ্ধর।
 কোটি কোটি রথী পড়ে অসংখ্য কুঞ্জর।।
 রক্তে নদী বহে সব রক্তেতে সাঁতারে।
 কালরূপ দেখি পার্থে ভঙ্গ দিল ডরে।।
 কামদেব সারণ বিচারি মনে মন।
 রামের নিকটে দূত করিল প্রেরণ।।
      ------
 বলরামের নিকট অর্জ্জুনের রণজয় সংবাদ
   সসৈন্যে বাহির হইলেন বলরাম।
 হেনকালে দূত গিয়া করিল প্রণাম।।
 সুভদ্রা চালায় রথ না পাই দেখিতে।
 কখন আকাশে উঠে কখন ভূমিতে।।
 যুদ্ধ করে পার্থ সব সৈন্যের সম্মুখে।
 কোন ঠাঁই থাকে তাহা কেহ নাহি দেখে।।
 নানাবর্ণে ধনঞ্জয় অস্ত্রগণ ফেলে।
 অগ্নি অস্ত্রে সবায় পোড়ায় দাবানলে।।
 সেই সে সবারে মারে কেহ তারে নারে।
 যতেক মারিল সৈন্য কে কহিতে পারে।।
 তার যুদ্ধ দেখিয়া হইল চমৎকার।
 বার্ত্তা দিতে পাঠাইল যতেক কুমার।।
 মুষলী বলেন দূত কহ সত্য কথা।
 এমন তুরঙ্গ রথ পাইল সে কোথা।।
 দূত বলে যাদবেন্দ্র কহিবারে ভয়।
 গোবিন্দের রথোপরি সুগ্রীবাদি হয়।।
 সারথি দারুক বান্ধা আছে বসি রথে।
 সুভদ্রা চালায় রথ দেখিনু সাক্ষাতে।।
 দূতমুখে বলভদ্র শুনি এই কথা।
 ভূমিতলে বসিলেন হৈয়া হেঁটমাথা।।
 অর্জ্জুনের কি শক্তি যে হেন কর্ম্ম করে।
 না বুঝিয়া দোষী আমি করি অর্জ্জুনেরে।।
 দুর্য্যোধনে ডাকাইনু বিবাহ কারণ।
 অধিবাস হেতু বসিয়াছে দ্বিজগণ।।
 এত বলি অধোমুখে বসিলেন রাম।
 হেনকালে আইলেন নবঘনশ্যাম।।
 ভূমে পড়ি বলদেবে করেন প্রণাম।
 নারায়ণে ক্রোধে না চাহেন বলরাম।।