এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
যজ্ঞেশ নারায়ণ কৃষ্ণ বিষ্ণো,
প্রত্যহ সেবা করে কন্যা জানি মুনি মন। করযোড়ে সম্মুখেতা থাকে অনুক্ষণ।। যখন যে আজ্ঞা করে জরৎকারু মুনি। আজ্ঞামাত্রে সেই কর্ম করয়া নাগিনী।। হেনমতে বহু সেবা করে প্রতিদিনে। তবে একদিন দেখি দিবা অবসানে।। জরৎকারী-উরুদেশে নিজ শির দিয়া। নিদ্রা যান মুনিরাজ অচেতন হৈয়া।। নিদ্রাগত মুনি হইল সন্ধ্যার সময়। দেখিয়া নাগিনী মনে ভাবিলেক ভয়।। অস্ত গেল দিনকর সন্ধ্যা যায় বৈয়া। না ডাকিলে ক্রোধ মোরে করিবে জাগিয়া।। নিদ্রাভঙ্গ হৈলে পাছে ক্রোধ করে মুনি। হইল পরম চিন্তা এত সব গণি।। যাহা করে করিবেক পরে মুনিরাজ। সন্ধ্যা ধর্ম্ম না করিলে হইবে অকাজ।। অবহেলে যেই দ্বিজ সন্ধ্যা নাহি করে। মহাপাপ জন্মে তাহার শরীরে।। এত ভাবি জরৎকারী বলিল ডাকিয়া। উঠ সন্ধ্যা কর প্রভু সন্ধ্যা যায় বৈয়া।। নিদ্রাভঙ্গ হইল মুনি উঠে মহাকোপে। লোহিতলোচন মুখ অধরোষ্ঠ কাঁপে।। অমান্য করিলি মোরে করে অহঙ্কার। সেই দোষে তোর মুখ না দেখিব আর।। জরৎকারী বলে প্রভু মোর নাহি দোষ। না বুঝিয়া কেন মোরে কর অভিরোষ।। সন্ধ্যা বহি যায় প্রভু সুর্য্য যায় অস্ত। সন্ধ্যাহীন যত পাপ জানহ সমস্ত।। সে কারণে নিদ্রাভিঙ্গ করিনু তোমার। তবে ত্যাগ কর মোরে করিয়া বিচার।। মুনি বলে নাগিনী বলিস না বুঝিয়া। আমি সন্ধ্যা না করিলেযাবে কি বহিয়া।। রে সন্ধ্যা তোর কেমন বিচার। মোরে না বলিয়া যাও বড় অহঙ্কার।। সন্ধ্যা বলে মুনিরাজ না করিহ ক্রোধ। এইত যে আছি আমি তব উপরোধ।। মুনি বলে নাগিনী শুনিলি নিজ কানে। অবজ্ঞা করিলি মোরে সাধারণ জ্ঞানে।। নিশ্চয় ত্যাজিয়া তোরে যাই আমি বন। পুনরাপি না দেখিব তোমার বদন।। মুনির নির্ঘাত বাক্য শুনিয়া সুন্দরী। কান্দিতে কান্দিতে চাহে চরণেতে ধরি।। না যানিয়া করিলাম প্রভু অপরাধ। এবার ক্ষমহ মোরে করহ প্রসাদ।। ভাই সব শুনে মোরে করিবে বিনাশ। তোমারে দিলেন ভাই বড় করে আশ।। মাতৃশাপে ভাতৃমনে বড় ছিল ভয়। তোমায় আমারে দিয়া ক্ষণ্ডিল সংশয়।। তোমার ঔরসে যেই হইবে নন্দন। তাহা হৈতে রক্ষা পাবে মোর ভাতৃগণ।। বঙ্গশ না হৈতে তুমি যাহ যা ছাড়িয়া। ভাতৃগণে প্রবোধিব কি বোল বলিয়া।। এত শুনি সদয় হইল মুনিবর। আশ্বাসিয়া কন্যা উদরে দিল কর।। অস্তি অস্তি বলিয়া বুলায় গর্ভা হাত। এই গর্ভে আছে পুত্র নাগকুলনাথ।। এই গর্ভে আছে যেই পুরুষ রতন। তোমার আমার কুল কারিবে রক্ষণ।। চিন্তা ছাড়ি যাও প্রিয়া নিজ ভ্রাতৃগৃহে। ভ্রাত্ত্রিগণে প্রবোধিবে যেনি দুঃখী নহে।। বলিলাম বাক্য মোর কভু মিথ্যা নয়। ত্যাজিলাম তোমারে যে জানিও নিশ্চয়।। আস্তিকের জন্ম ত্যাজিয়া কন্যার পাশ, মুনি গেরা বনবাস, নাগিনী রাখিয়া একাকিনী। অশ্রুজলপূর্ণ মুখে, করাঘাত হানি বুকে, ভ্রাতৃস্থানে চলিলা নাগিনী।। ক্রন্দন করয়ে স্বসা, মুখে নাহি আসে ভাষা দেখিয়া বাসুকি চমকিত।