পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুংসা-মপূর্ণকামনাং কামপূরামরাঙ্ঘ্রিপং।।

 পরম সহায় সখা পতিব্রতা নারী।
 যাহার সহায়ে রাজা সর্ব্ব ধর্ম্ম করি।।
 ভার্য্যা বিনা গৃহশূন্য অরণ্যের প্রায়।
 বনে ভার্য্যা সঙ্গে থাকে গৃহস্থ বলয়।।
 ভার্য্যাহীন লোক কেহ না করে বিশ্বাস।
 সদাই দুঃখিত সেই সদাই উদাস।।
 ভার্য্যাবন্ত লোক ইহকাল বঞ্চে সুখে।
 মরণে সংহতি হৈয়া তরে পরলোকে।।
 স্বামীর জীবনে ভার্য্যা আগে যদি মরে।
 পথ চাহি থাকে ভার্য্যা স্বামী অনুসরে।।
 মরিলে স্বামীরে উদ্ধারিয়া লয় স্বর্গে।
 হেন নীতিশাস্ত্রে রাজা কহে সুরবর্গে।।
 ভার্য্যা হৈতে নরপতি দেখে পুত্রমুখ।
 যাহা হৈতে লোক সব ভুঞ্জে নানা সুখ।।
 ভার্য্যা বিনা পুত্র করে কাহার শকতি।
 দেব ঋষি মুনি আদি যত মহামতি।।
 পুত্রের সমান রাজা নাহিক সংসারে।
 জন্মমাত্র মুখ দেখি পিতা মাতা তরে।।
 পিণ্ডদানে পুত্র তারে করয়ে উদ্ধার।
 হেন নীতি আছে রাজা বেদেতে প্রচার।।
 চতুষ্পদে গাভী শ্রেষ্ঠ দ্বিপদে ব্রাম্ভণ।
 অধ্যয়নে গুরু শ্রেষথ পুত্র আলিঙ্গন।।
 ধূলায় ধূসর পুত্র কর আবাহন।
 হৃদয়ের যত দুঃখ হইবে খণ্ডন।।
 হেন পুত্র দণ্ডাইয়া তোমার সম্মুখে।
 আলিঙ্গন কর রাজা পরম কৌতুকে।।
 অবজ্ঞা না কর রাজা নীচপুত্র নহে।
 উহার মহিমা যত মুনিগণ কহে।।
 শত শত করিবেক অশ্বমেধ ব্রত।
 সসাগরা একচ্ছত্র করিবে নিয়ত।।
 পিতার হুতাশে পুত্র সদা ভাবে দুঃখ।
 সে কারণে দেখিতে আইল তব মুখ।।
 আলিঙ্গন দিয়া রাজা তোষহ কুমারে।
 আমারে রাখ না রাখ যা হয় বিচারে।।
 বিশ্বামিত্র মম পিতা মেনকা জননী।
 প্রসবিয়া বনে গেল থুয়ে একাকিনী।।
 ত্যজিল জননী পূর্ব্বে তুমি ত্যজ এবে।
 তোমারে বলিব কি মরিব এই ভাবে।।
 নিশ্চয় মরিব আমি নাহি তব দুঃখ।
 এ পুত্রবিচ্ছেদে মম বিদরিছে বুক।।
 এত বলি শকুন্তলা বিনয় করিল।
 নৃপতি শুনিয়া তবে প্রত্যুত্তর দিল।।
 অকারণে পুনঃ পুনঃ কহ কি আমারে।
 তোমার বচন শুনি কেবা শ্রদ্ধা করে।।
 জনক তোমার যদি বিশ্বামিত্র মুনি।
 মেনকা অপ্সরা বেশ্যা তোমার জননী।।
 বিশ্বামিত্র লোভী বলি জানে ত্রিজগতে।
 জন্মিয়া ক্ষত্রিয়-বীর্য্যে গেল বিপ্রপথে।।
 বেশ্যাগর্ভে জন্ম তার বেশ্যার প্রকৃতি।
 এই পুত্র তোর নহে হেন লয় মতি।।
 মিথ্যা প্রবঞ্চনা করি ভাণ্ডাও আমারে।
 যাহ বা থাক কেহ না জিজ্ঞাসে তোরে।।
 শকুন্তলা কহে রাজা কহ বিপরীত।
 দেবলোকে নিন্দা করা নহেত উচিত।।
 তোমায় আমায় রাজা অনেক অন্তর।
 সুমেরু সরিষা রাজা কর পাঠান্তর।।
 মম মাতা স্বর্গবাসী তুমি বোইস ক্ষিতি।
 স্বর্গে মর্ত্যে সমতুল কর নরপতি।।
 আমার দেখহ শক্তি আপন নয়নে।
 এখনি যাইতে পারি যথা ইচ্ছা মনে।।
 ইন্দ্র যম কুবের ভুবন আদি করি।
 মুহূর্ত্তেকে চরাচর ভ্রমিবারে পারি।।
 যত নিন্দা কর সহি স্বামীর কারণে।
 আপনা না জানি নিন্দা কর অন্যজনে।।
 কুরূপ মনুষ্য রাজা নিন্দে সর্ব্ব্লোকে।
 যতক্ষণ দর্পণেতে মুখ নাহি দেখে।।
 সত্যসম পুণ্য রাজা না দেখি তুলনা।
 মিথ্যা হেন পাপ নাহি কহে মুনিজনা।।
 হেন মিথ্যাবাদী তুমি হইলে নিশ্চয়।
 তোমার নিকটে রহা উচিত না হয়।।
 এত বলি শকুন্তলা চলিল সত্বর।
 হেনকালে শব্দ হয় আকাশ উপর।।