পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্র--

 তার কর্ম্ম দেখিতে যতেক ঋষিগণ।
 ধিকার করিয়া সবে বলিল বচন।।
 নিকটে বসিতে যোগ্য নহে দুরাচার।
 দুর করি দেহ এরে করি গঙ্গাপার।।
 এত বলি সব মুনি ধরিল তাঁহারে।
 বান্ধি ভাসাইয়া দিল জাহ্নবীর নীরে।।
 ভেলার বন্ধনে ভাসি গেল বহুদূর।
 দৈবেতে দেখিল তারে বলি মহাশূর।।
 ধরিয়া আনিল ভেলা দেখিল ব্রাম্ভণ।
 জিজ্ঞাসিল তাহারে যতেক বিবরণ।।
 কহিল সকল কথা উতথ্য-নন্দন।
 বলি বলে আমি তোমা করিনু বরণ।।
 গৃহে আনি দ্বিজবরে করিল অর্চ্চন।
 সুদেষ্ণা রাণীকে ডাকি বলিল বচন।।
 এই দ্বিজে ভক্তি কর বংশের উন্নতি।
 দ্বিজ হতে পুত্র হবে আছে হেন নীতি।।
 অঙ্গ দেখি সুদেষ্ণা করিল অনাদর।
 শূদ্রা দাসী পাঠাইল যথা দ্বিজবর।।
 দ্বিজের ঔরসে তার হৈল পুত্রগণ।
 চারি বেদ ষটশাস্ত্র করে অধ্যয়ন।।
 হেনকালে বলি গেল দ্বিজের ভবন।
 জিজ্ঞাসিল এই সব কাহার নন্দন।।
 দ্বিজ বলে এরা নহে কুমার তোমার।।
 শূদ্রাগর্ভে জন্ম হৈল আমার কুমার।।
 অন্ধ দেখি আমায় তোমার পাটেশ্বরী।
 না আইল মম কাছে অনাদর করি।।
 এত শুনি বলি গেল নিজ অন্তঃপুরে।
 কহিল সকল কথা সুদেষ্ণা রাণীরে।।
 তবে ত চলিল রাণী স্বামীর আদেশে।
 তিন পুত্র জন্মাইল দ্বিজের ঔরসে।।
 অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ এ তিন পুত্রের নাম।
 পৃথিবীর মধ্যে রাজা হৈল অনুপম।।
 অঙ্গদেশে বসাইল জ্যেষ্ঠ পুত্র অঙ্গ।
 কলিঙ্গ কলিঙ্গদেশে, বঙ্গদেশে বঙ্গ।।
 হেনমতে দ্বিজ হৈতে ক্ষত্রিয়ের উৎপত্তি।
 পূর্ব্বাপর আছে হেন কৈল প্রজাপতি।।
 পরস্পর আছে এই কহে বেদবাণী।
 তোমার বিচারে সেই আইসে জননী।।
 মন্ত্রী পুরোহিত লৈয়া করহ বিচার।
 ভারতবংশের হেতু কর প্রতিকার।।
 সত্যবতী বলে পুত্র তুমি ব্রম্ভচারী।
 তোমার বচন আমি বেদতুল্য ধরি।।
 মম্ পূর্ব্ব বিবরণ কহি যে তোমাতে।
 যখন ছিলাম আমি পিতার গৃহেতে।।
 পিতা দেশে ধর্ম্মার্থে বাহি নৌকা নদীতে।
 তেজ পুঞ্জ ঋষি এক উঠে তরণীতে।।
 তাঁর নাম মহামুনি হয় পরাশর।
 মহাতেজা জ্যোতির্ম্ময় দেখি লাগে ডর।।
 কহিবার যোগ্য পুত্র নহে ত তোমারে।
 সে মুনির কর্ম্ম পুত্র অদ্ভুত সংসারে।।
 মৎসের দুর্গন্ধ মম শরীরে আছিল।
 আজ্ঞা মাত্রে পদ্ম গন্ধ মম দেহে হৈল।।
 কুজ্বটি সৃজিয়া মুনি কৈল অন্ধকার।
 মহাভয়ে বশীভূত হইলাম তাঁর।।
 তাহার ঔরসে মম হৈল নন্দন।
 দ্বীপমধ্যে পুত্র মোর হৈল সেইক্ষণ।।
 জন্মমাত্র তার কর্ম্ম লোকে অনুপম।
 দ্বীপে জন্ম হৈল তাই দ্বৈপায়ন নাম।।
 বেদ চতুর্ভাগ কৈল ব্যাস সে কারণ।
 কৃষ্ণ নাম বলি কৃষ্ণ অঙ্গের বরণ।।
 জন্মমাত্র পুত্র তবে যায় তপোবন।
 আমারে বলিয়া গেল এই ত বচন।।
 ত্বরিতে আসিব আমি করিলে স্মরণ।
 কন্যাকালে পুত্র মম ব্যাস তপোধন।।
 তোমার স্ম্মত হৈলে করি যে স্মরণ।
 তুমি আমি কহি তারে বংশের কারণ।।
 করযোড় করি বলে শান্তনু-নন্দন।
 তবে চিন্তা কর মাতা কিসের কারণ।।
 তোমার কুমার মাতা ব্যাস তপোধন।
 শীঘ্রগতি কর মাতা তাঁহাকে স্মরণ।।
 দেবগণমধ্যে যেথা ব্যাস তপোধন।
 ভীষ্মের বচনে দেবী করিল স্মরণ।।