পাতা:কাশীনাথ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S. কাশীনাথ হইয়াছিল। সে আসিয়া দেখিল, তাহার শ্বশুরের যথার্থই বড় কঠিন পীড়া হইয়াছে। সকলে মিলিয়া যথাসাধ্য চিকিৎসা করাইল, কিন্তু গোপালবাবুর কিছুতেই প্রাণরক্ষণ হইল না। পীড়া বড় বাডিয়া উঠিলে গোপালবাবু কহিলেন, ছোটবীেমাকে একবার নিয়ে এস-তাকে একবার দেখব। ছোটবোমা আমাদিগের বিন্দুবাসিনী ; মৃত্যুর দুই একদিবস পূর্বে গোপালবাবু বিন্দুকে বলিলেন, মা, এই চাবি নাও, ঐ বাক্সে যা রইল সব তোমাকে দিলাম। বিন্দু হাত পাতিয়া গ্ৰহণ করিল। অন্যান্য বন্ধুরা মনে করিল, বৃদ্ধ মরিবার সময় বিন্দুকেই সব দিয়া গেল । আরও এক কথা গোপালবাবু, পীড়ার মধ্যেই একদিন চারি সন্তানকেই কাছে ডাকিয়া বলিয়াছিলেন, দেখ বাবু, তোমাদের ভাইয়ে ভাইয়ে কিছুমাত্ৰ মিল নাই, এবং তোমাদের জননীও জীবিত নাই, তখন আমার মৃত্যু হলে তোমরা আর এক সংসারে থেকে না। মিথ্যা কলহ করে ভিন্ন হবার পূর্বে যেটুকু সদ্ভাব আছে, তা নিয়ে পৃথক হও । যা কিছু রেখে গেলাম, তার ওপর কিছু কিছু উপার্জন করলে তোমাদের সংসার স্বচ্ছন্দে চলবে । পিতার মৃত্যুর পরে সকলে পৃথক হইলে, বিন্দু একদিন বাক্স খুলিয়া দেখিল, ভিতরে একখানি রামায়ণ ও একখানি মহাভারত ভিন্ন আর কিছুই নাই। আশায় নিরাশ হইলেও বিন্দু স্বৰ্গীয় শ্বশুর মহাশয়ের দান মাথায় তুলিয়া লইল। বিন্দু অস্ফুটম্বরে বলিল, তঁাহার স্নেহের দান-ইহাই আমার রত্ন । দিন-কতক বিন্দুর সুখে-স্বচ্ছন্দে চলিল ; তাহার পর বিপদের আরম্ভ হইল। বিন্দুর স্বামী যোগেশবাবু পীড়িত হইয়া পড়িলেন। বিন্দু শরীরপাত করিয়া সেবা-শুশ্রুষা করিল, কয়েকখানি জমি বন্ধক দিয়া চিকিৎসা করাইল ; কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না । গ্রামস্থ কয়েকজন প্ৰতিবাসী তখন কলিকাতায় যাইয়া চিকিৎসা করাইতে বলিল। বিন্দুবাসিনী আপনার সমস্ত গহনা বিক্রয় করিয়া স্বামীকে লাইয়া কলিকাতায় আসিল । এখানেও বহু রকমের চিকিৎসা করাইতে অবশিষ্ট জমিগুলি ক্ৰমশঃ বন্ধক পড়িল ; কিন্তু রোগের