পাতা:কাশীনাথ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o শক্তিনাথ একমনে ঠাকুর গড়িতেছিল। পূজা করার চেয়ে, ঠাকুর তৈরি করিতে সে অধিক ভালবাসিত। কেমন রূপ কেমন নাক, কান, চোখ হইবে, কোন রং বেশি মানাইবে, এই তাহার আলোচ্য বিষয়। কি দিয়া তাহার পূজা করিতে হয়, কি মন্ত্রে জপ করিতে হয়, এসব ছোট বিষয়ে তাহার লক্ষ্য ছিল না । দেবতার সম্পর্কে সে আপনাকে আপনি প্রমোশন দিয়া, সেবকের স্থান হইতে পিতার স্থানে উঠিয়া আসিয়াছিল। তবু তাহার পিতা তাহাকে আদেশ করিতেন, শক্তিনাথ, আজ আমার জম্বর বেড়েছে, জমিদার বাটীতে গিয়ে তুমি পূজা করে এস। শক্তিনাথ বলিল, এখন ঠাকুর গড়ছি। বৃদ্ধ অসমর্থ পিতা রাগ করিয়া বলিলেন, ছেলে-খেলা এখন থাক বাবা, কাজ সেরে এস। পূজার মন্ত্র আবৃত্তি করিতে তাহার মোটে। ইচ্ছা হইল না—তবু উঠিতে হইল। পিতার আদেশে সুন্নান করিয়া, চাদর ও গামছা কঁাধে ফেলিয়া, দেবমন্দিরে আসিয়া দাড়াইল। ইহার পূর্বেও সে কয়েকবার এ মন্দিরে পূজা করিতে আসিয়াছে কিন্তু এমন কাণ্ড কখন দেখে নাই। এত পুষ্প-গন্ধ, এত ধূপ-ধূনার আড়ম্বর, ভোজ্য ও নৈবেদ্যের এত বাহুল্য। তার ভারি ভাবনা হইল এত লইয়া সে কি করিবে ? কিরূপে কাহার পূজা করিবে ? সকলের চেয়ে সে অপর্ণনাকে দেখিয়া আশ্চৰ্য্য হইয়া গেল। এ কে, কোথা হইতে আসিয়াছে, এত দিন কোথায় ছিল ? অপর্ণ কহিল, তুমি কি ভট্টাচাৰ্য্যামশায়ের ছেলে ? শক্তিনাথ বলিল, হঁ। -তবে পা ধুয়ে পূজা করতে ব’স। পূজা করিতে বসিয়া শক্তিনাথ আগাগোড়া ভুলিয়া গেল। একটা মন্ত্রও তাহার মনে পড়ে না। সেদিকে তাহার মনও নাই, বিশ্বাসও নাই--শুধু ভাবিতে লাগিল, এ কে, কেন এত রূপ, কি) জন্য বসিয়া আছে ইত্যাদি। পূজার পদ্ধতি ওলট পালট হইতে লাগিল। কখনো ঘণ্টা বাজাইয়া, কখনো ফুল ফেলিয়া, কখনো নৈবেম্ভের উপর জল ছিটাইয়া এই অজ্ঞ,