পাতা:কাশীনাথ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"কাশীনাথ qbس দেয়। শক্তিনাথ গন্ধ-পুষ্প হাত দিয়া তুলিয়া লয়, অপর্ণ অঙ্গুলি দিয়া দেখাইয়া বলে, বামুনঠাকুর, আজ এমনি করে সিংহাসন সাজাও দেখি, বেশ দেখাবে। এমনি করিয়া এই নৃহৎ মন্দিরের বৃহৎ কাজ চলিতে লাগিল। দেখিয়া শুনিয়া আচাৰ্য্য কহিলেন, ছেলে-খেলা হচ্ছে । বৃদ্ধ রাজনারায়ণ বলিলেন, যে করে হোক মেয়েটা নিজের অবস্থা ভুলে থাকলেই বঁচি । S, থিয়েটারের ষ্টেজে যেমন পাহাড় পৰ্ব্বত, ঝড় জল এক নিমিষে উড়িয়া গিয়া মস্ত রাজপ্ৰাসাদ কোথা হইতে আসিয়া জোটে, আর লোক-জনের সুখ-সম্পদের মাঝে, দুঃখ-দৈন্যের সমস্ত চিহ্ন বিলুপ্ত হয়, শক্তিনাথের জীবনেও যেন সেইরূপ হইয়াছে। সে জাগিয়াছিল, এখন ঘুমাইয়া সুখস্বপ্ন দেখিতেছে, কিংবা নিদ্রায় দুঃস্বপ্ন দেখিতেছিল, এখন হঠাৎ জাগিয়া উঠিয়াছে, প্ৰথমে তাহার ভাল ঠাহর হইত না । তথাপি এই দায়িত্বহীন দেব-সেবার সুবৰ্ণ-শৃঙ্খল যে তাহার সর্বাঙ্গে জড়াইয়া ধরিয়াছে এবং থাকিয়া থাকিয়া ঝন ঝন শব্দে বাজিয়া উঠিতেছে, ঐ বিক্ষিপ্ত পুতুলগুলা মাঝে মাঝে সে কথা তাহাকে স্মরণ করাইত, সে মৃত পিতার কথা মনে করিত, নিজের পূর্ব স্বাধীনতার কথা ভাবিত ; মনে হইত। সে যেন বিকাইয় গিয়াছে, অপর্ণ তাহাকে কিনিয়াছে ; অমনি অপর্ণার স্নেহ ক্ৰমে মোহের মত তাহাকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিল । অকস্মাৎ একদিন শক্তিনাথের মামাত ভাই আসিয়া উপস্থিত হইল, তাহার ভগিনীর বিবাহ। মামা কলিকাতায় থাকেন, সময় ভাল, কাজেই সুখের দিনে ভাগিনেয়কে মনে পড়িয়াছে। যাইতেই হইবে। কলিকাতা যাইবে- কথাটা শক্তিনাথের খুব ভাল লাগিল। সমস্ত রাত্রি সে দাদার নিকট বসিয়া কলিকাতার সুখের গল্প, শোভার কাহিনী, সমৃদ্ধির বিবরণ শুনিয়া মুগ্ধ হইয়া গেল। পরদিন মন্দিরে যাইতে তাহার ইচ্ছা হইল না। বেলা বাড়িতেছে দেখিয়া অপর্ণ