পাতা:কাশী-খন্ড - নিবারণচন্দ্র দাস.pdf/৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দ্বিতীয় বারের ভূমিকা।

 বরাননে! কত যুগ যুগন্তের স্মৃতি লইয়া তুমি স্বকীয় মহিমালোকে আলোকিত, কত ধর্ম্মপ্রাণ হিন্দুর অন্তশ্চক্ষুর সমক্ষে প্রত্যহ মোক্ষের দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিতেছ, কত উৎকণ্ঠিত হৃদয় দুর্দ্দৈববশতঃ তোমা হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া একাগ্রমনে কাতরস্বরে প্রার্থনা করিতেছে―

কদা বারাণস্যামিহা সুরধুনীবোধসিরবসন্
বসানঃ কৌপিনং শিরসি নিদধানঽঞ্জলিপুটম্।
অয়ে গৌরীনাথ ত্রিপুরহর-শম্ভো-ত্রিনয়ন
প্রসীদেতি ক্রোশন্নিমিষমিব নেষ্যামি দিবসান্॥

 এখনও উওর-বাহিনী জাহ্নবীর পূতসলিল-শােকর এবং দহ্যমান গুগ্গুলুর পবিত্র পরিমল বহন করিয়া মৃদু মন্দসমীরণ সহস্ৰ সহস্র পাতকীর পাপ-সন্তপ্ত অঙ্গের শীতলতা বিধান করিতেছে। এখনও তোমার লক্ষ লক্ষ দেবায়তনে বাদ্যমান কাংস্যতালাদির মধুর-নিনাদ অসংখ্য নর-নারীর কাতর আহ্বান-রবের সহিত সম্মিলিত হইয়া প্রতিরব-হিল্লোলে নীলা-নভোমণ্ডল আকুলিত করিতেছে। এখনও তোমার শান্তিময় ক্রোড়ে অন্তিম-শয়নে-শয়ান মরণপথের পথিকগুলি ত্রিপুরারির নিজ মুখে উচ্চারিত তারক-ব্রহ্মনাম শ্রবণ করিবার লালসায় দক্ষিণ-কর্ণ উত্থান করিয়া দিতেছে।

 হে পাঠক, ইহারই মহিমার পূর্ণ বিকাশ করিবার নিমিত্ত বাগ্দেবার বরপুত্র বেদব্যাস তাঁহার মহীয়সী লেখনী ধরিয়াছিলেন। এই মহান্ প্রয়াস আর কাহারও সামর্থ্যে সম্ভবে না, এই কথা প্রত্যক্ষ জানিয়াই যেন তিনি স্বয়ং এই গুরুভার স্ব-মস্তকে ন্যস্ত করিয়াছিলেন। তাই আজ আমরা কাশীখণ্ডরূপ পীযুষ নিষ্যন্দের আস্বাদনে অধিকারী। তাই আজ আমরা কুবের-ভাণ্ডারের দুর্লভ এই অমূল্য-ধনে ধনবান্। তাই আজ আমরা ধর্ম্মের লীলাক্ষেত্র বারাণসীর সহিত কথঞ্চিৎ পরিচিত। স্কন্দ-মহাপুরাণের অন্তর্গত এই কাশীখণ্ড সনাতনধর্ম্মের মেরুদণ্ড, সমগ্র হিন্দুধর্ম্মের ইতিহাসের একটা বৃহত্তম অংশ, হিন্দুর হিন্দুত্বের অসামান্য পরিচায়ক।

 কেবলমাত্র কাশীস্থ তীর্থগুলির পরিচয় প্রদান করিয়াই কাশীখণ্ড ক্ষান্ত নহে। ভগবান ব্যাসদেব ইহাতে অন্যান্য বিষয়েরও সমাবেশ করিয়াছেন; আগস্ত্যের কার্ত্তিকলাপ, বিন্ধ্যের দর্প-সংহার, পতিব্রতার গৌরবমণ্ডিত বৃত্ত, যমাদিলোক-বর্ণন,