পাতা:কাহিনী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
কাহিনী

সঙ্গীতের তরঙ্গিণী বৈকুণ্ঠের শান্তিসিন্ধু পারে।
মানুষের ভাষাটুকু অর্থ দিয়ে বন্ধ চারিধারে,
ঘুরে মানুষের চতুর্দ্দিকে। অবিরত রাত্রিদিন
মানবের প্রয়োজনে প্রাণ তার হয়ে আসে ক্ষীণ।
পরিস্ফুট তত্ত্ব তার সীমা নেয় ভাবের চরণে;
ধূলি ছাড়ি একেবারে ঊর্দ্ধমুখে অনন্তগগনে
উড়িতে সে নাহি পারে সঙ্গীতের মতন স্বাধীন
মেলি দিয়া সপ্তসুর সপ্তপক্ষ অর্থভারহীন।
প্রভাতের শুভ্র ভাষা বাক্যহীন প্রত্যক্ষ কিরণ
জগতের মর্ম্মদ্বার মুহূর্ত্তেকে করি উদ্ঘাটন
নির্ব্বারিত করি দেয় ত্রিলোকের গীতের ভাণ্ডার;
যামিনীর শান্তিবাণী ক্ষণমাত্রে অনন্ত সংসার
আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, বাক্যহীন পরম নিষেধ
বিশ্বকর্ম্ম কোলাহল মন্ত্রবলে করি দিয়া ভেদ
নিমেষে নিবায়ে দেয় সর্ব্ব খেদ সকল প্রয়াস,
জীবলোক মাঝে আনে মরণের বিপুল আভাস;
নক্ষত্রের ধ্রুব ভাষা অনির্ব্বাণ অনলের কণা
জ্যোতিষ্কের সূচিপত্রে আপনার করিছে সূচনা
নিত্যকাল মহাকাশে; দক্ষিণের সমীরের ভাষা
কেবল নিশ্বাসমত্রে নিকুঞ্জে জাগায় নব আশা,
দুর্গম পল্লবদুর্গে অরণ্যের ঘন অন্তঃপুরে
নিমেষে প্রবেশ করে, নিয়ে যায় দূর হতে দূরে
যৌবনের জগয়ান;―সেই মত প্রত্যক্ষ প্রকাশ
কোথা মানবের বাক্যে, কোথা সেই অনন্ত আভাস,