পাতা:কিন্নর দল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পারি না বলিয়া শাশুড়ী ঠাকরুণ মহা অসন্তুষ্ট, তিনি ভাবেন কত টাকাই রােজগার করিতেছি ডাক্তারীতে।

 কেহ বলিলে হয় তো বিশ্বাস করিবে না, আজ চার পাঁচ মাস এক রকম শুধু ভাত খাই। পাড়াগাঁ হইলেও এখানে জিনিসপত্র উৎপন্ন হয় না বলিয়া অতিরিক্ত আক্রা― পটল তুই আনা সের, আলু ছয় পয়সা। মাছ চার আনা, ছয় আনার কম নয়। কেহ দেখিতে পাইবে বলিয়া খুব ভােরে নদীর ধার হইতে শুশুনি আর কাঁচড়ালাম শাক তুলিয়া আনি মাঝে মাঝে। আজকাল আমের সময়, শুধু আম ভাতে আর ভাত। কতদিন শুধু নুন দিয়াই ভাত খাইয়াছি।

 পাশ করা ডাক্তার নই, কিন্তু তাতে কি? বাড়ী বসিয়া বই পড়িয়া কি আর ডাক্তারী শেখা যায় না? আজ সাত আট বছর তো ডাক্তারী করিতেছি, অভিজ্ঞতা বলিয়া একটা জিনিসও তো আছে। পাশকরা ডাক্তারের হাতে কি আর রােগী মরে না? ধােপাখালির ইন্দু ডাক্তার আসিয়া বিধু গােয়ালিনীর মেয়েটাকে বাঁচাইতে পারিয়াছিল?

 তবে কেন যে দুষ্ট লোকে রটাইয়াছে, মণি ডাক্তারের ওষুধ খাইলে জ্যান্ত মানুষ মরিয়া ভূত হয়, ইহার কারণ কে বলিবে? আমি গরীব বলিয়া আমার দিকে কেউ হয় না, এক মুজিবর ছাড়া— ঐ লোকটা আজ তিন চার মাস বিনা আপত্তিতে নিজের দোকান হইতে চাল ডাল না দিলে আমাকে উপৰাস করিতে হইত। সে আমার জন্য যত করিয়াছে, এ অঞ্চলের কেহ তাহার সিকিও কোনদিন করে নাই। তাহার ঋণ কখনও শোধ করিতে পারিব না।

 এ সব অজ-পাড়াগাঁ। রেলষ্টেশন হইতে দশ বারাে ক্রোশ দূরে। কাছে কোন বড় বাজার কি গঞ্জ নাই, লােকজন নিতান্ত অশিক্ষিত; রোগ হইলে ডাক্তার ডাকার বদলে জল-পড়া, তেল-পড়া দিয়া কাজ