পাতা:কিন্নর দল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্ময় দল অপরিচিত, কারো সঙ্গে বুধীর আলাপ হয় নাই তেমন, আলাপ করিবার মত মনের অবস্থাও তাহার ছিল না । কেহ যত্ন করিয়া তাহাকে খাওয়ায় নাই। এখানকার খাবার মুখে দেবার উপায় নাই। কেমন যেন ভ্যাপসা গন্ধ, ভাল আস্বাদ তো নাই-ই, ভাল গন্ধ পৰ্যন্ত নাই খাবারের। বুড়ী তাহাকে যত্ন করিয়া খুকীর মত ভালবাসিত না অতটা-কিন্তু সন্ধ্যার সময় পেট পুরিয়া খাইবার ব্যবস্থা করিতে কখনও ক্ৰটী করে নাই। সত্যি, এ যে কোন জায়গায় আনিয়াছে, তাহার আদৌ কোনো ধারণাই নাই। এমন অদ্ভুত ও ভয়ঙ্কর জায়গা তার অভিজ্ঞতার বাহিরে ছিল এতদিন। কি হট্টিগোল, নানারকম নতুন নতুন বিকট বিকট শব্দ জায়গাটাতে ! তাহার মন আরও পাগল হইয়া উঠিল। এ শব্দে ও আওয়াজে। জীবনে কখনো এত অদ্ভুত ধরণের সব আওয়াজ সে শুনে নাই। অথচ তাহার বয়েস কম হয় নাই। বুধীর জীবন কাটিয়াছে এই বিশ্ৰী জায়গা হতে বহু দূরে। কত দূর তাহার ঠিক ধারণা নাই, কিন্তু মোটের ওপর বহু, বহু দূরে অন্য এক স্থানে যেখানে অবারিত সবুজ মােঠ আছে, অপুৰ্ব্ব সুভ্রাণে ভরা কোমল, সরস ঘাসে ঢাকা, কি সুন্দর স্বাদ সে ঘাসের ! মাঠের ধারে কলম্বনা নদী, নদীর কিনারায় জলের ধারা পৰ্যন্ত নানা জাতীয় ঘাসের ও জলজ শাকের বন-ঠাণ্ড, নরম তাজা-কি অপূৰ্ব তাদের সুগন্ধ। স্বাদ তো আছেই ভালো কিন্তু সেই নতুন-ওঠা বর্ষা-সতেজ কচি ঘাস ও কলমীলতার তাজা গন্ধের কথা যখনই মনে হয়, যখন মনে পড়ে এক হাঁটু দীর্ঘ, ঘনশ্যাম তৃণরাজির মধ্যে মুখ ডুবাইয়া পেট ভরিয়া সে তৃপ্তির ভোজ-হু-হু উন্মুক্ত বাতাস ও দূরপ্রসারী প্রান্তরের মধ্যে সে মুক্তির আনন্দ-তখন বুধী সত্যই ক্ষেপিয়া যায়-তাহার জ্ঞান থাকে না। মুক্তির জন্য সে উন্মাদ হইয়া