পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
কুরু পাণ্ডব
[৯

 অনন্তর অর্জ্জুন পুনরায় গাণ্ডীব গ্রহণ করিয়া গাত্রোত্থানপূর্ব্বক যুদ্ধকার্য্যে মনোনিবেশ করিলেন।

 উভয় পক্ষের বিপুল সৈন্যমণ্ডলীর যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থানের সংবাদ প্রাপ্ত হইলে সর্ব্ব-বেদজ্ঞশ্রেষ্ঠ ব্যাসদেব স্বীয় দুর্নীতির পরিণাম-চিন্তায় শোকাকুল ধৃতরাষ্ট্রসমীপে উপস্থিত হইলেন এবং তাঁহাকে নির্জ্জনে কহিলেন—

 হে রাজন্। কালের পর্য্যায় বোধগম্য করিয়া তুমি সংগ্রামার্থ পরস্পর সম্মুখীন পুত্রগণের নিমিত্ত শোকে চিত্তার্পণ করিও না। হে পুত্র! যদি সংগ্রামস্থলে ইহাদিগকে তোমার দেখিবার ইচ্ছা হয়, তবে আমি তোমাকে দিব্যচক্ষু প্রদান করিব।

 ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন—হে ব্রহ্মর্ষি-সত্তম। জ্ঞাতিবধ সন্দর্শনে আমি অভিলাষ করি না, কিন্তু আপনার অনুগ্রহে যুদ্ধের সমুদায় বৃত্তান্ত শ্রবণ করিতে ইচ্ছা করি। ব্যাসদেব ধৃতরাষ্ট্রের অভিপ্রায় অবগত হইয় সঞ্জয়কে বরপ্রদান পূর্ব্বক কহিলেন―

 এই সঞ্জয় তোমার নিকট যুদ্ধের সমস্ত বৃত্তান্ত বলিবে। সংগ্রামের কোন ঘটনাই ইহার অগোচর থাকিবে না; প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে, দিবায় বা নিশায় যাহা কিছু ঘটিবে, সঞ্জয় সমস্তই অবগত থাকিবে। শস্ত্র ইহাকে ছিন্ন করিবে না এবং পরিশ্রম ক্লান্ত করিতে পারিবে না। হে ভরতশ্রেষ্ঠ! তুমি শোকাভিভূত হইও না, আমি এই কুরুপাণ্ডবগণের কীর্ত্তি চিরবিখ্যাত করিয়া দিব।