পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৪
কুরু পাণ্ডব
[১০

চরণ করিয়া এবং তদুপরি অশিষ্ট দুর্য্যোধনেৱ মর্ম্মভেদী সন্দেহব্যঞ্জক বাক্যযন্ত্রণা সহ্য করিয়া করিয়া ভীষ্মের সুগভীর বৈরাগ্য-প্রভাবে জীবন ধারণের ইচ্ছা সম্পূর্ণ তিরােহিত হইয়াছিল, সুতরাং তিনি প্রসন্নমনে কহিলেন―

 হে পাণ্ডবগণ! আমি জীবিত থাকিতে তােমাদের জয়লাভের সম্ভাবনা নাই; অতএব আমি অনুমতি করিতেছি তােমরা স্বচ্ছন্দে আমাকে প্রহার করিও। তোমরা যে আমার সম্মান রক্ষা করিয়াছ ইহাতেই আমি পরম পরিতুষ্ট হইয়াছি, এক্ষণে আমাকে সংহার না করিলে এ যুদ্ধের আর শেষ হবে না। হে যুধিষ্ঠির! তােমার সৈন্য মধ্যে শিখণ্ডিনামক যে দ্রুপদতনয় আছে, সে প্রকৃতপক্ষে পুরুষত্বপ্রাপ্ত নারী; অতএব তাহার প্রতি আমি অস্ত্রপ্রয়ােগ করিতে পারি না। এই বৃত্তান্তু অবগত হইয়া তোমরা আমার বধের নিমিত্ত উপযুক্ত উপায় বিধান করিও। ইহাই তোমাদের প্রতি আমার উপদেশ।

 পিতামহকে পরাজয় করিবার উপায় অবগত হইয়া যুধিষ্ঠির মহাত্মা ভীষ্মকে অভিবাদনপূর্ব্বক কৃষ্ণ ও ভ্রাতৃগণসমভিব্যাহারে স্বশিবিরে প্রত্যাগমন করিলেন। কিন্তু অর্জ্জুন প্রাণ-পরিত্যাগ-সমুদ্যত পিতামহের বাক্য শ্রবণে দুঃখ-সন্তপ্ত ও লজ্জিত হইয়া কৃষ্ণকে কহিলেন—

 সখে! বাল্যকালে ক্রীড়া করিতে করিতে ধূলিঅনুলিপ্ত-কলেবরে যাঁহাকে পিতা সম্বোধন করিলে যিনি বলিতেন― আমি তোমার পিতা নহি, তোমার পিতার