পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০]
কুরু পাণ্ডব
১৮৩

উপকরণ লইয়া তথায় উপস্থিত হইলে ভীষ্ম তাহা দেখিয়া কহিলেন—

 হে দুর্য্যোধন! তুমি ইহাদিগকে উপযুক্ত সৎকার করিয়া বিদায় কর। আমি ক্ষত্রিয়বাঞ্ছিত পরমগতি প্রাপ্ত হইয়াছি, চিকিৎসার আর প্রয়ােজন নাই। আমার মৃত্যুকাল উপস্থিত হইলে এই শরশয্যার সহিত আমার শরীর দগ্ধ করিও।

 অনন্তর বৈদ্যগণ প্রস্থিত হইলে ভীষ্ম দুর্য্যোধনকে কহিলেন—

 বৎস। এক্ষণে ক্রোধ পরিত্যাগ কর। আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আমার মৃত্যুতেই যুদ্ধের অবসান হৌক। আমার মৃত্যুর পর প্রজাগণের শান্তিলাভ হৌক, পার্থিবগণ প্রীতিমান্ হইয়া পরস্পরের সহিত মিলিত হৌন, পিতা পুত্রকে ভ্রাতা ভ্রাতাকে ও আত্মীয়সকল পরস্পরকে প্রাপ্ত হৌন। হে রাজন! তুমি প্রসন্ন হও। পাণ্ডবগণকে রাজ্যার্দ্ধ প্রদানপূর্ব্বক উহাদের সহিত সন্ধিস্থাপন কর।

 এইমাত্র বলিয়া শল্য-সন্তপ্ত-মর্ম্মা ভীষ্ম বেদনাভরে চক্ষুনিমীলনপূর্ব্বক আত্মাকে যােগস্থ করিয়া তুষ্ণীম্ভাব অবলম্বন করিলেন। পাণ্ডব, কৌরব ও সমবেত ভূপালগণ তাঁহাকে তিন বার প্রদক্ষিণ করিয়া অভিবাদন করিলেন এবং তাঁহার চতুর্দ্দিকে পরিখাখনন ও রক্ষক নিয়ােগপূর্ব্বক সঙ্গে বিষণ্ণ মনে স্ব-স্ব-শিবিরে প্রস্থান করিলেন।

 কিন্তু মুমূর্ষু ব্যক্তির ঔষধে অনভিরুচির ন্যায় পিতামহের বাক্যে দুর্য্যোধনের আস্থা হইল না।