পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
কুরু পাণ্ডব
[১০

 এদিকে মহাবীর কর্ণ ভীষ্মের পতন-সংবাদে পূর্ব্ববৈর বিস্মৃত হইয়া সত্বরগমনে তাঁহার নিকট উপস্থিত হইলেন। নিমীলিত-নয়ন কুরুপিতামহকে রুধিরাক্ত কলেবরে অন্তিমশয্যায় শয়ান দেখিয়া সহৃদয় কর্ণ তাঁহার পদতলে নিপতিত হইয়া বাষ্পাকুলকণ্ঠে কহিলেন—

 হে মহাত্মন্। যে সর্ব্বদা আপনার নয়নপথের অতিথি হইয়া আপনার অপ্রীতিভাজন হইত― সেই রাধেয় আপনাকে অভিবাদন করিতেছে।

 ভীষ্ম এই বাক্য শ্রবণে বলপূর্ব্বক নেত্রদ্বয় উন্মীলন করিয়া যখন দেখিলেন, যে তথায় আর কেহ উপস্থিত নাই, তখন রক্ষকগণকে অপসারিত করিয়া পিতার ন্যায় তিনি কর্ণকে দক্ষিণ হস্তদ্বারা আলিঙ্গনপূর্ব্বক সস্নেহবচন, কহিলেন—

 হে কর্ণ! তুমি সর্ব্বদা আমার সহিত স্পর্ধা করিতে, কিন্তু এ সময়ে আমার নিকট আগমন না করিলে আমি দুঃখিত হইতাম। আমি বিশ্বস্ত সূত্রে অবগত আছি, যে তুমি রাধেয় নহ, তুমি কুন্তী-নন্দন। সত্য কহিতেছি, আমি কদাপি তোমার প্রতি দ্বেষ করি নাই। তুমি পাণ্ডবগণের বিরুদ্ধাচরণ করিতে বলিয়া আমি তোমার তেজোবোধের নিমিত্ত পরূষবাক্য কহিতাম। তোমার দুর্ব্বিষহ বীরত্ব ও ধর্ম্মনিষ্ঠা আমি বিলক্ষণ অবগত আছি। তোমার প্রতি পূর্ব্বে যে ক্রোধ সঞ্চার হইয়াছিল, তাহা অদ্য অপনীত হইল। হে পুরুষপ্রবীর! আর এ বৃথা যুদ্ধে প্রয়োজন কি? তুমি