পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১০
কুরু পাণ্ডব
[১১

 অনন্তর পাণ্ডবসৈন্য প্রতিব্যূহিত হইলে অর্জ্জুন যুধিষ্ঠিরের রক্ষার্থে উপযুক্ত ব্যবস্থা করিয়া কহিলেন―

 হে বাসুদেব! যেখানে দুস্মর্ষণ অবস্থান করিতেছে, সেই স্থানে প্রথমত রথ লইয়া চল। আমি ঐ গজ-সৈন্য ভেদ করিয়া অরি-ব্যূহমধ্যে প্রবিষ্ট হইব।

 মহাবাহু কৃষ্ণ এই বাক্য অনুসারে রথচালনা করিলে অর্জ্জুনের সহিত কৌরবগণের ভীষণ সংগ্রাম সমুপস্থিত হইল। মেঘ যেমন পর্ব্বতোপরি বারি বর্ষণ করে, মহাবীর অর্জ্জুন তদ্রূপ অরাতিগণের উপর শরবর্ষণ করিতে আরম্ভ করিলেন। তাহাতে অসংখ্য রথী পদাতি ও মাতুঙ্গ বিনষ্ট হইলে কৌররযোদ্ধৃগণ হতোৎসাহ ও পলায়নপর হইল।

 তখন দুঃশাসন ভ্রাতার সৈন্য-বিভাগকে তদবস্থ দেখিয়া ক্রোধভরে অর্জ্জুনাভিমুখে গমনপূর্ব্বক গজসৈন্যদ্বারা তাহাকে বেষ্টন করিলেন। ক্ষত্রিয়শ্রেষ্ঠ ধনঞ্জয় সায়ক দ্বারা তাহাদের কলেবর ছিন্ন ভিন্ন করিতে করিতে সেই উত্তাল তরঙ্গ-সঙ্কুল মহাসাগরের ন্যায় ক্ষুদ্র শত্রুদল ভেদ করিয়া তন্মধ্যে প্রবেশপুর্ব্বক সন্নতপর্ব্ব ভল্লদ্বারা গজারূঢ় পুরুষগণের মস্তকচ্ছেদন করিতে লাগিলেন।

 এইরূপে কতকগুলি গজ ভূপতিত ও কতকগুলি আরোহিহীন হইয়া সৈন্যমধ্যে ভ্রমণ করিতে আরম্ভ করিলে সৈন্যগণ পুনরায় পলায়নের উপক্রম করিল। দুঃশাসনও পার্থশরে জর্জ্জরিতাঙ্গ হইয়া দ্রোণ-রক্ষিত ব্যূহমধ্যে আশ্রয় লইলেন।