পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১]
কুরু পাণ্ডব
২২১

এবং জয়দ্রথও আনন্দ ভরে আশ্রয়স্থান পরিত্যাগপূর্ব্বক উল্লসিত আননে অস্তগত সূর্য্যের দিকে দৃষ্টিবদ্ধ করিলেন।

 একমাত্র বাসুদেব প্রকৃত অবস্থা বুঝিতে পারিয়াছিলেন, তিনি তৎক্ষণাৎ অর্জ্জুনকে কহিলেন—

 হে পার্থ! সুর্য্য প্রকৃতপক্ষে অস্তগত হয় নাই, ক্ষণকাল অদৃশ্য হইয়াছে মাত্র, তুমি এই অবসরে অনায়াসে জয়দ্রথের মস্তক ছেদন করিতে পারিবে।

 এই কথায় অর্জ্জুন সত্বর সিন্ধু রাজের রথাভিমুখে ধাবমান হইলে জয়দ্রথ-রক্ষকগণ সংশয়ারূঢ় হইয়া পূর্ব্ববৎ তাঁহাকে বেষ্টন করিবার সুযােগ পাইলেন না। সৈন্যগণও ধনঞ্জয়ের রােষাবিষ্ট আগমনে ভীত হইয়া তাঁহাকে পথ প্রদান করল। তখন অর্জ্জুন অভিমন্যুর মৃত্যুর হেতুস্বরূপ সেই জয়দ্রথকে প্রাপ্ত হইয়া সৃক্কণী-লেহনপূর্ব্বক কতসন্ধান ভীষণ শর পরিত্যাগ করিলেন। শ্যেনপক্ষী যেরূপ শকুন্তকে হরণ করে, তদ্রূপ গাণ্ডীব-নির্ম্মুক্ত সেই বাণ জয়দ্রথের মস্তক হরণ করিল।

 ইত্যবসরে সুর্য্য তিমির-মুক্ত হইয়া লােহিত-কলেবরের শেষাংশ প্রকাশ করিলে, সকলে দেখিলেন যে সূর্য্যাস্তের পূর্ব্বেই অর্জ্জুন স্বীয় প্রতিজ্ঞ সফল করিয়াছেন।

 তখন জয়ঘােষণার্থে কৃষ্ণ পাঞ্চজন্য শঙ্খ প্রধ্নাপিত করিলে ভীম ঘােরতর সিংহনাদে দিগ্বিদিক পরিপূর্ণ করিলেন। তৎশ্রবণে যুধিষ্ঠির জয়দ্রথ-বধ বৃত্তান্ত অনুমান করিয়া উচ্ছ্বসিত আনন্দভরে বাদ্যধ্বনিদ্বারা অন্তরীক্ষ প্রতিধ্বনিত করাইলেন।