পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪০
কুরু পাণ্ডব
[১১

চতুরঙ্গিণী সেনা সেই বীরদ্বয়কত্তৃক নিপীড়িত হইয়া সিংহতাড়িত মৃগযূথের ন্যায় পলায়ন করিতে লাগিল। ভুপালগণ কর্ণের হস্তিকেতু এবং অর্জ্জুনের কপিধ্বজ এতদুভয় রথকে ঘোরনির্ঘোযে পরস্পরের প্রতি ধাবমান দেখিয়া বিস্ময়াবিষ্টচিত্তে সিংহনাদ-সহকারে সেই বীরদ্বয়কে অনবরত সাধুবাদ প্রদান করিতে লাগিলেন। কর্ণকে উৎসাহ প্রদানার্থে কৌরবগণ চতুর্দ্দিকে বাদিত্রধ্বনি সমুত্থিত করিল এবং পাণ্ডবপক্ষীয় শঙ্খ ও তূর্য্যনিনাদে অর্জ্জুনের অভিনন্দন করা হইল।

 অনন্তর উদ্ভিন্নদন্ত মদমত্তমাতঙ্গদ্বয় যেমন পরস্পর সংঘটিত হয় কর্ণাজ্জুনও তদ্রূপ সম্মিলিত হইলেন। মহাবীর কর্ণ দশ শরে ধনঞ্জয়কে প্রথমে বিদ্ধ করিলে অর্জ্জুনও হাস্য করিয়া সূতপুত্রের বক্ষঃস্থলে শিতধার দশ শর নিক্ষেপ করিলেন। তৎপরে সেই বীরদ্বয় অসংখ্য সুপুঙ্খ সায়কে পরস্পরকে ক্ষতবিক্ষত করিলেন।

 এই সময়ে দ্রোণপুত্র অশ্বত্থামা দুর্য্যোধনের হস্তধারণপূর্ব্বক কহিলেন―

 মহারাজ! এক্ষণে ক্ষান্ত হও। যাহাতে মহারথ ভীষ্ম এবং অস্ত্রবিদ্যা-বিশারদ পিতা নিহত হইয়াছেন; সে যুদ্ধে ধিক্! আমি ও আমার মাতুল অবধ্য বলিয়াই জীবিত আছি; কর্ণ বিনষ্ট হইলে তুমিও পরিত্রাণ পাইবে না; অতএব, হে কুরুরাজ! তুমি শুনুমতি দাও, আমি ধনঞ্জয়কে নিবৃত্ত হইতে অনুরোধ করি; তিনি নিশ্চয়ই আমার কথা রক্ষা করিবেন।