পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪২
কুরু পাণ্ডব
[১১

করিয়া কর্ণের শরসমুদায় নিরাকৃত করিলেন। তাঁহার মহাস্ত্রপ্রভাবে অন্তরীক্ষ পরিব্যাপ্ত হওয়ায় পক্ষিগণের গতিরোধ হইল। কর্ণ অর্জ্জুনের অশনিতুল্য শরে সাতিশয় ব্যথিত হইলেন এবং তাঁহার রক্ষকগণ আত্মীয়দিগকে নিহন্যমান দেখিয়া পলায়ন করিতে আরম্ভ করিল। কিন্তু মহাবীর কর্ণ রক্ষককর্ত্তৃক পরিত্যক্ত হইয়াও নির্ভীকচিত্তে অর্জ্জুনকে আক্রমণ করিতে লাগিলেন।

 এইরূপে বল বীর্য্য পৌরুষ ও অস্ত্রকৌশল-প্রভাবে কখন কর্ণ ধনঞ্জয় অপেক্ষা, কখন অর্জ্জুন সূতপুত্র অপেক্ষা প্রবল হইলেন।

 অনন্তর বহুক্ষণ যুদ্ধ হইলে যখন কর্ণ কোন ক্রমেই ধনঞ্জয়কে অতিক্রম করিতে পারিলেন না, প্রত্যুত তন্নিক্ষিপ্ত শরনিকরে সাতিশয় সন্তপ্ত হইয়া উঠিলেন তখন বহুদিন যত্নরক্ষিত বিষমুখ সর্পবাণ তাঁহার স্মৃতিপথে উদয় হইল। তিনি অর্জ্জুনের মস্তক ছেদনার্থে সেই জ্বালাকরাল ভয়ঙ্কর শর পরিত্যাগপূর্ব্বক কহিলেন—

 অর্জ্জুন! এইবার তুমি নিহত হইলে।

 মহাত্মা বাসুদেব সেই সূতপুত্র-নিক্ষিপ্ত নাগাস্ত্র অন্তরীক্ষে প্রজ্জ্বলিত দেখিয়া সুশিক্ষিত অশ্বগণকে ইঙ্গিত করিবামাত্র তাহারা জানু আকুঞ্চিত করিয়া ভূতলে অবস্থানপূর্ব্বক রথের অগ্রভাগ সহসা অবনত করিয়া দিল। তখন সেই অর্জ্জুনের গ্রীবার প্রতি লক্ষিত শর তাঁহার সুদৃঢ় ইন্দ্রদত্ত কিরীটে নিপতিত হইয়া তাহা চূর্ণ করিয়া ফেলিল।