পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কুরু পাণ্ডব
১৭

তিনি ইতিপূর্ব্বেই ধৃতরাষ্ট্রের অজ্ঞাতসারে এক অতি ঘোর পাপাভিসন্ধি মনে পোষণ করিতেছিলেন, তাহা এক্ষণে কার্য্যে পরিণত করিবার সুযোগ পাইলেন। পুরোচননামা এক দুর্ম্মতি সচিবকে আহ্বান করিয়া দুর্য্যোধন তাহাকে কহিতে লাগিলেন—

 হে পুরোচন! পাণ্ডবগণ পাশুপত-উৎসবে বিহারার্থ বারণাবৎ নগরে গমন করিবেন। তুমি দ্রুতগামী অশ্বতরযোজিত রথে অদ্যই তথায় গমন কর। নগরের প্রান্তদেশে শন সর্জ্জরস জতুকাষ্ঠ প্রভৃতি যাবতীয় অগ্নিভোজ্য দ্রব্যদ্বারা একটি সুদর্শন চতুঃশালাগৃহ নির্ম্মাণ করাইবে। মৃত্তিকায় প্রচুর পরিমাণে তৈল ও লাক্ষাদি সংযোগ করিয়া তাহা দ্বারা ঐ গৃহের ভিত্তি লেপন করাইবে। চতুর্দ্দিকে বিবিধ আগ্নেয় দ্রব্য গুপ্তভাবে রক্ষা করিবে। পাগুবের বারণাবতে উপস্থিত হইলে সুযোগ বূঝিয়া পরম সমাদরে তাহাদিগকে তথায় বাস করিবার জন্য অভ্যর্থনা করিবে। এবং দিব্য আসনযান ও শয্যা প্রদানে পরিতুষ্ট করিবে। কিছুকাল পর তাঁহারা আশ্বস্তচিত্তে তথায় বাস করিতে আরম্ভ করিলে রাত্রিকালে ঐ গৃহে অগ্নিসংযোগপূর্ব্বক উহাদিগকে ধ্বংস করিবে। সাবধান, যেন পিতা এবং পুরবাসিগণ ইহাকে অকস্মাৎ অগ্নি বলিয়া মনে করেন—যেন পাণ্ডববধ-জনিত কলঙ্ক আমাদিগকে স্পর্শ না করে।

 পাপাত্মা পুরোচন এই কথায় সম্মত হইয়া তৎক্ষণাৎ দ্রুতগমনে বারণাবতে উপস্থিত হইয়া জতুগৃহ নির্মাণ কার্য্য আরম্ভ করিল।