পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
কুরু পাণ্ডব

 ক্রমে এক ফলমূলজল-বিহীন হিংস্রজন্তুসমাকুল মহারণ্যের মধ্যে ঘোর অন্ধকারময় সন্ধ্যা সমাগত হইল। দারুণ পশুপক্ষীরব চতুর্দ্দিকে শ্রুত হইল, ভীষণ শব্দকারী বায়ু প্রবাহিত হইতে লাগিল। কুমারগণ নিদ্রাবেশে জড়তাক্রান্ত এবং ক্ষুধায় কাতর হওয়ায় চলৎশক্তিরহিতপ্রায় হইলেন। তৃষ্ণাতুরা কুন্তী বিলাপ করিতে লাগিলেন—

 হায়! আমি পঞ্চপাণ্ডবের জননী হইয়া এবং পুত্রগণের মধ্যে থাকিয়া পিপাসায় কাতর হইলাম।

 কোমলহৃদয় ভীমসেন ইহা সহ্য করিতে না পারিয়া চতুর্দ্দিকে বিহ্বল দৃষ্টিপাতে ইতস্তত ভ্রমণ করিয়া নির্জ্জন বনমধ্যে এক বিপুলচ্ছায় রমণীয় বটবিটপী দেখিতে পাইলেন। সকলকে তথায় বিশ্রামার্থ উপবেশন করাইয়া তিনি যুধিষ্ঠিরকে কহিলেন—

 হে আর্য্য! তোমরা এখানে ক্লান্তি দূর কর, আমি জল অন্বেষণ করি। দূরে সারসধ্বনি শুনা যাইতেছে, ঐ স্থানে নিশ্চয়ই জলাশয় আছে।

 জ্যেষ্ঠ অনুমতি প্রদান করিলে ভীম দ্রুতগতিতে সেই জলচর পক্ষীর শব্দ অনুসরণ করিয়া এক জলাশয়ে উপনীত হইলেন। অবগাহন ও জলপানে বিগতক্লেশ হইয়া উত্তরীয় বসনে মাতা ও ভ্রাতাদের জন্য জল বহন করিয়া তিনি অতি ত্বরায় সমাগত হইলেন। আসিয়া দেখিলেন, তাঁহারা ইতিমধ্যেই একান্ত শ্রান্তিভরে ধরণীতলে শয়ন করিয়া নিদ্রাভিভূত হইয়াছেন। প্রিয়তমদের এই অবস্থা দর্শনে ভীমের শোকের আর পরিসীমা রহিল না। তিনি ভাবিলেন—