কিন্তু কেউ স্পষ্ট বুঝতে পারেন না। বিজ্ঞানী আর দার্শনিক শব্দে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য আর যুক্তিসিদ্ধ তথ্য খোঁজেন, যেটুকু জানতে পারেন, তাতেই তুষ্ট হন, শিব বা অশিব, সুন্দর বা বীভৎস কিছুতেই তাঁদের পক্ষপাত নেই। কিন্তু কবি আর ভক্ত প্রমাণের অপেক্ষা রাখেন না, তাঁরা রস চান, ভাব চান, আনন্দ চান। এজন্য কল্পনা আর রূপকের আশ্রয় নিয়ে মানস বিগ্রহ রচনা করেন, সমগ্র বস্তুর ধারণা করতে না পারলেও খণ্ডে খণ্ডে অনূভব করেন, তবে দৈবাৎ কেউ কেউ পূর্ণানুভূতি পান। মিল্টন আর মধ্যসমূদন পেগান ছিলেন না, তব, তাঁরা অমৃতভাষিণী বাগ্দেবীর আবাহন করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র আর রবীন্দ্রনাথ আমাদের দেশ আর দেশবাসীর ত্রুটি বিলক্ষণ জানতেন, তবু তাঁরা ঐশ্বর্যময়ী মাতৃভূমির বন্দনা করেছেন। Wordsworth বলেছেন—Great God! I would rather be a pagan, suckled in a creed outworn.. ইত্যাদি। মঙ্গলময় ভগবান না হলে সাধারণ ভক্তের চলে না, কাজেই অমঙ্গলের কারণস্বরূপ তাকে কর্মফল, জন্মান্তর, অরিজিনাল সিন, ফ্রি উইল, শয়তান, কলি ইত্যাদি মানতে হয়। ভক্ত কবি অমঙ্গলের কারণ খোঁজেন না, যেটুকু মঙ্গল পান তাতেই কৃতার্থ হন। তিনি দেখেন—‘আছে আছে প্রেম ধূলায় ধূলায়, আনন্দ আছে নিখিলে।’ তিনি বলেন‘এ জীবনে পাওয়াটারই সীমাহীন মূল্য, মরণে হারানোটা তো নহে তার তুল্য।’
১৪৯