পাতা:কৃষ্ণকান্তের উইল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম খণ্ড-নবম পরিচ্ছেদ ९e কিন্তু এক বিষয়ে রোহিণী কৃতসংকল্প হইল—জাল উইল চালান হইবে না । ইহার এক সহজ উপায় ছিল—কৃষ্ণকাস্তকে বলিলে, কি কাহারও দ্বারা বলাইলেই হইল যে, মহাশয়ের উইল চুরি গিয়াছে—দেরাজ খুলিয়া যে উইল আছে, তাহা পড়িয়া দেখুন। রোহিণী যে চুরি করিয়াছিল, ইহাও প্রকাশ করিবার প্রয়োজন নাই—যেই চুরি করুক, কৃষ্ণকাস্তের মনে একবার সন্দেহমাত্র জন্মিলে, তিনি সিন্দুক খুলিয়। উইল পড়িয়া দেখিবেন— তাহা হইলেই জাল উইল দেখিয়া নূতন উইল প্রস্তুত করিবেন। গোবিন্দলালের সম্পত্তির রক্ষা হইবে, অথচ কেহ জানিতে পারিবে না যে, কে উইল চুরি করিয়াছিল। কিন্তু ইহাতে এক ৰিপদ-কৃষ্ণকান্ত জাল উইল পড়িলেই জানিতে পারিবেন যে, ইহা ব্ৰহ্মানন্দের হাতের লেখা—তখন ব্রহ্মানন্দ মহা বিপদে পড়িবেন। অতএব দেরাজে যে জাল উইল আছে, ইহা কাহারও সাক্ষাতে প্রকাশ করা যাইতে পারে না । অতএব হরলালের লোভে রোহিণী, গোবিন্দলালের যে গুরুতর অনিষ্ট সিদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিল, তৎপ্রতিকারার্থ বিশেষ ব্যাকুলা হইয়াও সে খুল্লতাতের রক্ষামুরোধে কিছুই করিতে পারিল না। শেষ সিদ্ধান্ত করিল, যে প্রকারে প্রকৃত উইল চুরি করিয়া জাল উইল রাখিয়া আসিয়াছিল, সেই প্রকারে আবার প্রকৃত উইল রাখিয়া তৎপরিবর্তে জাল উইল । লইয়া আসিবে। নিশীথকালে, রোহিণী সুন্দরী, প্রকৃত উইলখানি লইয়া সাহসে ভর করিয়া একাকিনী কৃষ্ণকান্ত রায়ের গৃহাভিমুখে যাত্রা করিলেন। খড়কীদ্বার রুদ্ধ ; সদর ফটকে যথায় দ্বারবানেরা চারপাইয়ে উপবেশন করিয়া, অৰ্দ্ধনিমীলিত নেত্ৰে, অৰ্দ্ধরুদ্ধ কণ্ঠে, পিলু রাগিণীর পিতৃশ্ৰাদ্ধ করিতেছিলেন, রোহিণী সেইখানে উপস্থিত হইল । দ্বারবানের জিজ্ঞাসা করিল, “কে তুই ?” রোহিণী বলিল, “সখী ।” সখী, বাটীর একজন যুবতী চাকরাণী, সুতরাং দ্বারবানেরা আর কিছু বলিল না। রোহিণী নিৰ্ব্বিত্বে গৃহমধ্যে প্রবেশপূর্বক, পূৰ্ব্বপরিচিত পথে কৃষ্ণকান্তের শয়নকক্ষে গেলেন—পুরী সুরক্ষিত বলিয়া কৃষ্ণকাস্তের শয়নগৃহের দ্বার রুদ্ধ হইত না। প্রবেশকালে কাণ পাতিয়া রোহিণী শুনিল যে, অবাধে কৃষ্ণকান্তের নাসিকাগর্জন হইতেছে । তখন ধীরে ধীরে বিনা শব্দে উইলচোর গৃহমধ্যে প্রবেশ করিল। প্রবেশ করিয়া প্রথমেই দীপ নির্বাপিত করিল। পরে পুৰ্ব্বমত চাবি সংগ্ৰহ করিল। এবং পূর্বমত, অন্ধকারে লক্ষ্য করিয়া, দেরাজ খুলিল। রোহিণী অতিশয় সাবধান, হস্ত অতি কোমলগস্তি। তথাপি চাবি ফিরাইতে খটু করিয়া একটু শব্দ হইল। সেই শব্দে কৃষ্ণকাস্তের নিদ্রাভঙ্গ হইল। ?