পাতা:কোন পথে? - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS8 কোন-পথে ? ব্ৰাজত্বের পতন ঘটেছে এবং জার্মান সেনাবাহিনী প্যারিসের দ্বারদেশে উপনীত হয়ে সব শহরের সেরা এই শহরকে এমনভাবে দখল করে। নিল যা সাধারণ লোকের কাছে সামরিক যুদ্ধপরিচালনায় অঘটন বলে মনে হয়েছে। দূরবিনের চোখে দেখা বিচিত্র দৃশ্যপটের মত ইওরোপে যা ঘটে যাচ্ছে তার অবশ্যম্ভাবী প্ৰতিক্রিয়া ভারতের উপরেও পড়েছে। ইওরোপে ব্রিটেনের সাম্রাজ্যবাদী পরাক্রমের উপর প্রতিটি আঘাত আমার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে এবং অধীনস্থ রাজ্যগুলিতে ব্রিটেনের দৃঢ়মুষ্টি শিথিল হতে বাধ্য । আমরা ভারতে কী করছি সেদিকে একেবারে দৃকপাত না করে ইতিহাসের চাকা ঘুরেই চলেছে। অতএব একটা শিশুরও বোঝা উচিত, আজকের পরিবর্তিত অবস্থায় পূর্ণ স্বরাজ অর্জন করতে হলে বারো মাস আগে আমাদের যে প্ৰচেষ্টা ও স্বাৰ্থত্যাগ করা দরকার ছিল এখন তার থেকে অনেক কম প্ৰয়োজন হবে । কিন্তু আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী আমাদের সামনে যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতে হলে আমাদের নিজেদের মধ্যে যথেষ্ট একতা ও সংহতি থাকা একান্ত দরকার । সারা ভারত যদি আজ সমস্বরে নিজের কথা বলতে পারত। তাহলে আমাদের দাবি প্ৰায় অপ্ৰতিরোধ্য হয়ে উঠত। এর থেকে দাড়াচ্ছে, আমাদের যেমন জাতীয় সংগ্রামকে স্বতীব্রতর করার ও ব্যাপকতর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার কথা ভাবতে হবে, একই সঙ্গে আমাদের জাতীয় একতা ও সংহতিকে যতদূর সম্ভব বিকশিত করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে । কিন্তু যে কোন অবস্থাতেই সংগ্ৰাম অবশ্যক। বিনা সংগ্রামে আমাদের শাসকরা সহজে নোয়াবে না । আমরা অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে সাম্রাজ্যবাদীরা ইতিহাস থেকে কখনই শিক্ষা লাভ করে না। তাছাড়া জাতীয় সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বামপন্থীরা যে চাপ দিয়ে চলেছে তা যদি প্ৰত্যাহৃত হয় আমাদের নিজেদের নেতারাই হয়ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে আপসরফা করতে প্ৰলুব্ধ হবে । অতএব সংগ্রামকে তীব্ৰতর ও প্রসারিত করতে এবং একই সঙ্গে জাতীয় একতা ও সংহতির বিকাশ ঘটাতে কী কী ব্যবস্থা আপনাদের এখনই অবলম্বন করা উচিত আপনাদের তা বিবেচনা করতে হবে।