পাতা:কোন পথে? - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8V কোন পথে ? সত্ত্বেও মনস্তত্ব ও দর্শন সম্পর্কে আমার আগ্ৰহ আমি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। লরিতে সিংহাসনের মত চেয়ারে কিংবা মোটরগাড়ির হুডের উপরে বসে কিংবা সুন্দর করে সাজানো ঘোড়ায় টানা গাড়িতে চেপে নারীপুরুষের ভীড় লক্ষ্য করার এবং তাদের মনস্তত্ত্ব অনুধাবন করার দুর্লভ সুযোগ পাওয়া যায়। সন্দেহ নেই, অবস্থাটা শো-কেসের মধ্যে একটা পুতুলে যদি প্রাণসঞ্চার করা হয় অনেকটা সেইরকম তা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে এই অভিজ্ঞতার মূল্য আছে। জব্বলপুরের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। বিপুল শোভাযাত্ৰা অভ্রান্তভাবে জনতার ভালোবাসাকেই প্ৰকট করেছিল এবং সেই সঙ্গে আমি যে আদর্শের প্রচার করছিলাম তাতে তাদের স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন। জনসভাটিও নিঃসন্দেহে সাফল্যমণ্ডিত হয়েছিল এবং স্থানীয় বন্ধুদের মতে, জনসভা ও শোভাযাত্রা-দুটিই এমন হয়েছিল যার সঙ্গে জব্বলপুরের সেরা রেকর্ডের তুলনা করা চলে। এইসব প্ৰকাশ্য ঘটনাগুলি থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না প্রদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কর্মীদের নিয়ে বন্ধঘরে ছোট কনফারেন্সটি । সেখানে সংগঠনের একটা কাঠামো খাড়া করা হয়েছিল এবং স্থায়ীভাবে কিছু একটা রেখে যাওয়া যাচ্ছে ভেবে আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। জব্বলপুর থেকে মোটরে চেপে অল্পক্ষণের জন্যে আমি মাশুল যাই। মে মাসের দুপুরের খরা রোদে সেখানে বিরাট এক জনতা প্ৰতীক্ষা করছিল। চাদি ফাটানো রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটা বিদ্রোহী বক্তৃতা শোনার জন্যে অপেক্ষা করা, এ বোধহয় মাঝবোশেখের প্রমত্ততা, তবু এই ধরনের মত্ততায়, যে মত্ততা মানুষকে রোদ বৃষ্টির কথা ভুলিয়ে দেয়, এমন কিছু আছে যা মহৎ, যা পবিত্র। , জব্বলপুর থেকে বোম্বাই আসার পথে মধ্যবর্তী স্টেশনগুলিতে আবার দেখলাম উদগ্রীব জনতার ভীড় । সব জায়গাঙেই দু-চার কথায় কিছু বলতে হল। মহাকোশলের সফর এত কম সময়ের জন্য হল বলে আমি আফসোস না করে পারিনি। ৭ই জুন বোম্বাই পৌঁছিয়ে এক বিস্ময়কর ব্যাপার প্রত্যক্ষ করি ।