ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
সুনীতি বন্ধুগৃহ হইতে যখন বাড়ি ফিরিল তখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে। সারাদিনের পরিশ্রান্ত দেহমন লইয়া নিজের শয়ন-গৃহে চলিয়া গিয়া চুপে চুপে চোখ বুজিয়া কিছুক্ষণ অন্ততঃ বিছানায় তার পড়িয়া থাকার একান্ত ইচ্ছা ছিল, কিন্তু তার ভাগ্যের সে ইচ্ছা মোটেই ছিল না, তাই সামনের বারান্দা দিয়া ভিতরের অনতিবৃহৎ বসিবার ঘরখানায় ঢুকিতেই যে দৃশ্য তার চোখে পড়িল, ইহার জন্য সে মনের মধ্যে সর্ব্বদা শঙ্কিত থাকিলেও আজকের সন্ধ্যাটায় একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। শুধু মনেই নয়, শরীরেও সে আজ আদৌ সুস্থ নাই। আঃ! এতটুকু, একটুখানি বিশ্রাম, অন্ততঃ খানিকটা সময়ের জন্যেও যদি সে চুপটি করিয়া পড়িয়া থাকিতে পারিত! অতীতের স্মৃতি আজ তাকে একান্তরূপেই যে অভিভূত করিয়া ফেলিয়াছে। শারীরিক শ্রমও তাকে বড় কম করিতে হয় নাই, পয়সার অভাবে হাঁটিয়াছেও সে অনেকটাই।
তার বাবা, এই বাড়ীর যিনি কর্ত্তা, চন্দ্রকুমার চক্রবর্তী দরজার দিকে মুখ করিয়া খাড়া দাঁড়াইয়া আছেন। চেহারা তাঁর মোটের উপর একদিন বেশ ভালই ছিল, এখনও তার সবটা ধ্বংস হইতে পারে নাই, নাক-চোখে তার সুস্পষ্ট চিহ্ন আজও জাগিয়া আছে, মুখের রঙটা তামার মত হইয়া গেলেও গায়ের রঙয়ে আজও সুবর্ণের আভাষ পাওয়া যায়, মাথার চুলের মধ্যভাগে টাক পড়িতেছে, চোখের দৃষ্টি বিস্ফারিত ও সদা-চঞ্চল, ঠোটের পাশে মৃদু মৃদু অর্থশূন্য মন্দ হাস্য। মেয়েকে দেখিতে পাইয়াই তিনি ফোঁস করিয়া একটা ছোবল মারিলেন, “কি? এতক্ষণে এলে! আজ আমার খেতে জোটেনি সে খবরটি রাখো কিছু?”