পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯১
হেমলক

 সুগভীর একটা শ্বাস মোচন করে সে বললো, “এমন করে দিনের পর দিন বেঁচে থাকা যায়? অ্যাঁ! আর ঐ যে জীবটা তার জন্মান্তরের কত মহাপাতকের ফলেই না জানি কে আমার ঘরে জমেছে, ওটার পক্ষে এ কি হচ্চে, বল তো? দেড় বছরের হ’তে যায়, না পারে ভাল করে চলতে, না শিখেছে ভাল করে কথা কইতে, হাসি কি স্ফূর্ত্তি ও’তো জানেই না। ‘রিকেটি’ হয়ে যাচ্চে বন্দী জীবনে থেকে থেকে। ওর মায়ের অত্যধিক স্নেহাতঙ্কই শেষ পর্য্যন্ত ওকে শেষ না করে ছাড়বে না, নিজেও শেষ হবে।”

 নাঃ, পাওয়ার-হাউসের মধ্যে কোন সন্দিগ্ধ পরিবেশ দৃষ্ট হলো না। সে যেন সেই পুরাকাহিনীর লখিন্দরের লোহার বাসর-ঘর। কালনাগিনী কোন সূত্রে এর ভিতর প্রবিষ্ট হয়, সে সত্যই মহা রহস্য। ভূত অবশ্য মানি না, বিশেষতঃ সায়াণ্টিফিক ভূত। কিন্তু তা ভিন্ন কি বলাই বা যায় এক্ষেত্রে? সমস্ত দেওয়ালে ঘা মেরে মেরে ঘরের মেজেয় বড় বড় হাতুড়ি ঠুকে ঠুকে দেখা আগেই হয়েছিল, আমিও যেটুকু সম্ভব আবার দেখলাম, নিরেট কঠিন গাঁথুনি, একটু চূণবালি খসলো না। বাহিরে এসে চারপাশে দেখা হলো, বাড়ীর বেষ্টনী প্রাচীর থেকে অন্ততঃ একশো গজ দূরে এ ঘর। আশে-পাশে কোথাও কোন বড় গাছ নেই, সেকথা আগেই বলেছি। প্রথমটা একটু বিস্মিত হয়েছিলেম, এতবড় জমির মধ্যে ফলের গাছ নেই এটা আশ্চর্য্য! এক সময় হয়ত ছিল, কেটে ফেলে পাঁচিল থেকে বেশ অনেকখানি বাদ দিয়ে নূতন নূতন কলমের চারা বসানো হয়েছে, যাদের ফলবান হয়ে উঠতে যুগান্তর এসে যাবে। তাহলে এর এইই কারণ? পরে শুনলাম এই কাণ্ডটি নাকি করিয়েছেন খুকীর মা ইলা দেবীই। বাগানের সমস্ত নামজাদা আম জাম কাঁটাল জামরুল গোলাপ-জাম এমন কি, নারকোল গাছগুলোকেও তিনি বেঁচে