ইলাকে দেখলে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। ইলা মেয়েকে বুকে তুলে নিয়েই হঠাৎ কেঁদে ফেলে। মেয়ে অবাক হয়ে মায়ের মুখ নিরীক্ষণ করতে করতে আস্তে আস্তে সান্ত্বনা দেয়,—“কেঁনো না, তুপ কলো, অতুক্ তব্বে, আঙ্কাল বুক্বে। দত্তি মা! কেঁনো না।”
মিসেস পাকড়াসীকে আমি ঠিক বুঝতে পারি না। উনি ওঁর ওয়ার্ডের চার্জ্জ থেকে মুক্তি পেয়ে খুসী না বিরক্ত? ওঁর ওই ভাবাবেগশূন্য পাথরে কোঁদা মুখে কিছুমাত্র তা বোঝবার উপায় নেই।—অদ্ভুত এই নারী।
কিন্তু বোঝবার দিন হঠাৎ একদিন বড় শীঘ্রই আমাদের সামনে এসে পৌঁছে গেল। অন্ধকার রাত্রি, মেঘও খানিকটা আকাশের কোলে কোলে জমে রয়েছে। চাঁদ তো নেই-ই, নক্ষত্রও কদাচিৎ চলমান মেঘের ফাঁকে এক একটা করে দেখা দিয়ে যাচ্ছিল। ঘুমটা ভেঙ্গে গেছলো, বিছানা ছেড়ে উঠেছি, হঠাৎ আমার ঘরের ঠিক নীচে বাগানের সেই কেতকী-কুঞ্জের ওপাশ থেকে মানুষের গলার সাড়া এলো,—সেটা চাপা একটা তর্জ্জন।
“তোমায় সেদিন শেষ নোটিশ দিয়ে গেছি যে ইলার মেয়েকে সাত দিনের মধ্যে যদি খতম করতে না পারো, একসঙ্গে এ বাড়ীর সব্বাই মরবে সেকথা ভুলে নিশ্চয় যাওনি?”
এর উত্তরও শোনা গেল চাপা ক্রোধ ও বিরক্তিতে ভরা—“আচ্ছা একি জুলুম তোমার, নিজে যা করতে পারো করো, আমি একটা স্ত্রীলোক, একদিন ভদ্র ঘরেরই মেয়ে ছিলেম, তোমার ছলনায় ভুলে আজ আমায় একটা ফাঁসুড়ে খুনির স্ত্রী হতে হয়েছে, সে তো একটা জন্মের জন্যে, না না—বহু বহু জন্মের জন্যেই যথেষ্ট, তা’তেও তুমি খুসী নও? ঐ কচি বাচ্ছাটাকে আমায় দিয়ে হত্যা করাবে? তবু তোমার ভয়ে তাকে হাতে না মেরে স্লো-পয়জন তো করছিলামই,