পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৩
হেমলক

থানায় বারম্বার যাতায়াত, যতরকম অস্বস্তিকর ব্যাপার পৃথিবীতে ছড়ানো আছে সমস্তই একত্রিত হলো। আমিই ছিলুম এ কেসের প্রধান সাক্ষী। সেই দুটি রাত্রির নৈশ অভিসারের অদৃশ্য অভিনেতাদের মুখনিঃসৃত বিচিত্র সংলাপের একক শ্রোতা। এ ভিন্ন আর কেউই কোন কিছুই বলতে পারলে না, যাতে করে এই গভীর হস্যজনক ব্যাপারের অন্ধকারময় কৃষ্ণ-যবনিকা ভেদ করে একটু ক্ষীণতম আলোকরশ্মির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। মৃতার জিনিষপত্রের মধ্য থেকে একখানি হিসাবের খাতায় লেখা নামটি পাওয়া গেল, কুমুদিনী হাজরা। ইলাদেবীকে ওঁর হস্তাক্ষর চেনবার জন্য দেখামাত্র তিনি কাঁপতে কাঁপতে একটা অস্ফুট চীৎকার করেই মূর্চ্ছিত হয়ে গেলেন। এইটুকু তার থেকে বোঝা গেল, এ হাতের লেখা ঐ “বিন্দুমতী পাকড়াসীর”ই বটে! ওরই মধ্যে আর একটা অর্দ্ধব্যক্ত ধ্বনি আমার কানে এসে আঘাত করেছিল, “পিশাচ! পিশাচ! তুমি নরপিশাচ!” কে সেই নরপিশাচ? পিশাচী বললে না হয় কুমুদিনীকে বোঝাতে পারতো যে, তার মেয়েকে স্লো-পয়জন করে বিশ্বাসহন্ত্রী হয়ে মেরে ফেলতে বসেছিল। ‘তুমি’ থেকে মনে হলো হত্যাকারী এঁর খুবই অজানা লোক নন। কিন্তু জেরা করে করে কোন ফলই ফললো না। কোন প্রশ্ন করলেই সঙ্গে সঙ্গে অর্দ্ধব্যক্ত কাতরানি ভিন্ন আর কিছুই পাওয়া যায় না—বরঞ্চ নূতন করে এক একট দীর্ঘস্থায়ী ফিট হয়ে যায়। এমন করে এ মেয়ে বাঁচবেই বা কতক্ষণ? আর বেঁচেই বা করবে কি এ? অথচ মনে হয়, ইচ্ছা করলে এ অনেক কিছু জানিয়ে দিয়ে প্রতিকার করবার পথ করে দিতে পারতো। কিন্তু এ কি অদ্ভুত কাণ্ড? কি আশ্চর্য্য রহস্য ওর মধ্যে নিহিত?

 আমি ইতিমধ্যে একটা নূতন আবিষ্কার করে ফেলে স্তম্ভিত হয়ে