পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৫
হেমলক

বিদূরিত হয়ে গিয়ে ও মানুষ হয়ে উঠবে। হয়েছে—অবশ্য কতকটা কদিনেই! কিন্তু ভিতরে ভিতরে বিষক্রিয়াও তো কিছুটা থেকে গেছে এখন পর্য্যন্ত,—আর ওই সাংঘাতিক সর্পবিষ!

 এই সব নানান হাঙ্গামা চলেছে, দিব্যেন্দু পুনশ্চ সদর থেকে খুব বড় এক্সপার্ট এনে ইলেক,ট্রিকের বন্দোবস্ত করিয়ে ওর সেই যন্ত্রালয়টাকেও ইলেক্‌ট্রিফায়েড করিয়ে নিলে। না জেনে যেখান দিয়েই যে কেউ প্রবেশ করতে চেষ্টা করবে তাকেই নিমিষের মধ্যে বিদ্যুতাহত হয়ে মরতেই হবে। সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুতালোকে সমস্ত বাড়ী-বাগান দিনের আলোর মত উজ্জ্বল হয়ে রইলো, হাজার দুহাজার পাঁচহাজার পাওয়ারের আলোয় নৈশোদ্যানের প্রত্যেক অংশ স্পষ্ট দেখা যেতে লাগলো। গোপনীয় বলে কোথাও কিছু আর এর মধ্যে থাকতেই পারলো না।

 মধ্যরাত্রে সহসা সমস্ত আলোই এক সঙ্গে নির্ব্বাপিত হয়ে গিয়ে ঘোর অন্ধকারে চারদিক মেঘাচ্ছন্ন অমানিশার মূর্ত্তি ধারণ করলে। নিঃসন্দিগ্ধ পুরবাসী অন্য সমস্ত আলো বাতি সে রাত্রে একেবারে গুদামজাত করে ফেলেছিল। একটা হৈ-চৈ পড়ে গেল। ক্রমশঃ আলো জ্বালাও দু’একটা করে হতে লাগলো। আমি ও দিব্যেন্দু দুটো টর্চ্চ নিয়ে বাগানে বেরিয়ে পড়েছিলেম। কোন চিহ্ন কোথাও নেই সত্যি, কিন্তু সেই ভূতপূর্ব্ব কেয়াবনের দিক থেকে একটা ভারী জুতাপায়ের শব্দ সুস্পষ্টরূপেই আমাদের দুজনার কানে এসে পৌঁছেছিল, তাতে দুজনেই আমরা সম্পূর্ণরূপে নিঃসন্দিগ্ধ।

 পাওয়ার হাউসে যথারীতি পূর্ব্বানুবৃত্তি হয়ে গেছে। তার সমস্ত যন্ত্রপাতি বিপর্য্যস্ত, এমন অবস্থা যে মেরামত করবার কোন উপায় পর্য্যন্ত আর নেই।

 এ কি প্রহেলিকা! সত্য সত্যই ভৌতিক কাণ্ড নাকি?