পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৭
হেমলক

হয়ে যায়। ওরা রাওলপিণ্ডির অধিবাসী। সঙ্গে ছিলেন ওর মস্ত বড় পাগড়ী-বাঁধা চুড়িদার পায়জামা আচকান-পরা বাবা। যদিও পরিচয় দিয়েছিলেন বাঙ্গালী ব্রাহ্মণ বলেই, কিন্তু কথায় বার্ত্তায় আচার ব্যবহারে তাঁকে কোন মতেই বাঙ্গালী বলা চলে না, এতই তিনি খাঁটি পাঞ্জাবী।”—একটু থেমে বললে, “বুঝতেই পাচ্চো, সে শ্রীমূর্ত্তি প্রত্যক্ষ করলে কাকারা কখনই তাঁর কন্যাকে বধূ করে ঘরে আনতে রাজী হতেন না, অগত্যা ওদের পশ্চাদানুবর্ত্তন করে ‘পিণ্ডিতে’ গিয়ে পুরুত ডেকে যথাশাস্ত্র পাণিগ্রহণ-পর্ব্ব সেরেই একেবারে ওকে বাড়ী নিয়ে ফিরলেম। তা’ আমাদের শাস্ত্রেও তো রয়েছে, “স্ত্রীরত্নং দুষ্কুলাদপি,”—কেমন, না? নেই একথা?”

 উত্তর দিলেম, “আছে বৈকি! আর তোমার স্ত্রী—‘স্ত্রী রত্নই’। বড় দুঃখ হয় এমন মেয়ের জীবন এমন কষ্টের হয়ে গেল।” দিব্যেন্দু একটা সুগভীর দীর্ঘশ্বাস মোচন করলে।

 প্রশ্ন করলাম, “আচ্ছ। ওর সেই পগ্যধারী বাপের কি হল? আসে টাসে?”

 দিব্যেন্দু যেন শিউরে উঠলো, “ভগবান রক্ষা করুন! সে এলেই তো এর উপর আমি একেবারেই গেছি! ইলা অবশ্য সব কথা জানে। বাপটিও কি কম সয়তান! আমার মনের ভাব বুঝে নিয়ে আমায় সে-ই প্রলোভিত করে বিয়ের ব্যবস্থা করলে; যেই সব পাকা হয়ে গেল তখন বলে বসলো, তার সর্ব্বস্ব দুষমনে লুটে নিয়ে গেছে। পাঁচ হাজার টাকা না পেলে বিয়ে দেবে না, এ টাকা তার কর্জ্জ আছে।” অত টাকা তখন এক কথায় দেওয়া আমার পক্ষে খুবই কঠিন, তুমি বুঝেই দেখ। একবার ভাবলুম, যাক্‌গে, বিয়েয় কাজ নেই, ফিরেই যাই।—কিন্তু ইলাকে দেখলে সঙ্কল্প ঠিক রাখা কঠিন হয়ে ওঠে। বেশ বুঝতে পারি, ও-ও যেন আকুল হয়ে আমার উপর