পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৯
হেমলক

একজন বিদেশিনী গবর্ণেসের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছিল, ইতিমধ্যে দু’একখানা আবেদনপত্র এসেও গেছে, লোক ঠিক হলে তার হাতে মেয়ে ও মেয়ের মাকে সঁপে দিয়ে আমি বিদায় নোব। অবশ্য সেকথা মুখে প্রকাশ করে বলবার উপায় নেই। দিব্যেন্দু তো প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়, ইলাকে ভরসা করে বলাই হয়নি।

 হঠাৎ সে রাত্রে এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেল।

 বেশ জোর হাওয়া বয়ে চলেছে, দূর থেকে নদীজলের প্রবাহধ্বনি অন্যদিনের মত অস্ফুটভাবে নয়, একটু প্রবল হয়েই ভেসে আসছে। বৃষ্টি আসবার বিলম্ব নেই, মুহুর্মুহুঃ বজ্রধ্বনির সঙ্গে বিদ্যুদ্বিকাশ হচ্ছিল। শুনতে শুনতে কোন সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেম বুঝতে পারিনি, হঠাৎ দরজার বাইরে থেকে সজোরে করাঘাতের পর করাঘাতের দ্রুত অস্থির ধ্বনিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। এক মুহূর্ত্ত সময় লাগলো নিশ্চিত হতে। আমার দরজাতেই কেউ ধাক্কা দিচ্চে, না আর কোথাও।

 দরজার খিল্‌টা খুলে দিতেই সবেগে কে ঘরে ঢুকে পড়লো এবং দুরন্ত ঝড়ো-হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষীণশিখায় জ্বালিয়ে রাখা ল্যাম্পের আলোটুকু নিবে গেল। অকস্মাৎ সর্ব্বাঙ্গে কাঁটা দিয়ে আমার মনে পড়ে গেল সেই অতীতের সন্ধ্যাটিকে,—যেদিন এইরকমই দোর ঠেলে অজ্ঞাত ব্যক্তির আকস্মিক অভ্যুদয় ঘটেছিল। সেদিনও ঠিক এই রকমই আলো নিবেছিল এবং সেই সঙ্গে মুমূর্ষু ফকিরের কাছে পাওয়া সর্প-বিয়ের প্রতিষেধকের হাতে-কলমে পরীক্ষার সুযোগ ঘটে আমায় আজ একজন আবিষ্কারকের উচ্চ সম্মানে সম্মানিত ও অর্থসৌভাগ্যে সৌভাগ্যবান করে তুলেছে।

 কিন্তু অতীতকে স্মরণ করে আমি আনন্দের পরিবর্ত্তে একান্ত